কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হাই কানুকে গলায় জুতার মালা পরিয়ে লাঞ্ছিতের ঘটনায় মামলা হয়েছে। চারদিন পর করা মামলায় জামায়াতের দুই সমর্থকসহ ২২ জনকে আসামি করা হয়েছে।
বুধবার রাতে ১০ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরো ১০-১২ জনকে আসামি করে মামলাটি করা হয়। বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হাই কানু স্বাক্ষরিত এজাহারটি ফেনীর বাসা থেকে দুপুরে চৌদ্দগ্রামের কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা থানায় নিয়ে আসেন। রাতে মামলাটি রেকর্ড করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন চৌদ্দগ্রাম থানার ওসি এ টি এম আক্তার-উজ জামান জানান।
মামলায় হামলা, চাঁদাবাজি ও মানহানির অভিযোগ আনা হয়েছে।
মামলার আসামিরা হলেন- জামায়াতে ইসলামীর বহিষ্কৃত সমর্থক চৌদ্দগ্রামের কুলিয়ারা গ্রামের আবুল হাশেম মজুমদার (৪৮) ও অহিদুর রহমান মজুমদার (৪০); একই গ্রামের রাসেল (৩০), ইসমাইল মজুমদার (৪০), বেলাল হোসেন (৪৫), পেয়ার আহাম্মদ মজুমদার (৩৭), নয়ন মজুমদার (৩২), এমরান (৩৪), পাশের পাতড্ডা গ্রামের শিমুল (৩৫), শনপুর গ্রামের রুবেল (৩৫)।
রোববার আবদুল হাই কানুর গলায় জুতার মালা পরিয়ে তাকে সারা গ্রাম ঘুরিয়ে লাঞ্ছিত করে একদল লোক। তারা ওই ঘটনার ভিডিও ধারণ করে। সন্ধ্যার পর ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া হয়।
এক মিনিট ৪৭ সেকেন্ডের সেই ভিডিওতে দেখা যায়, দুই ব্যক্তি জুতার মালা পরা অবস্থায় কানুকে টানাহেঁচড়া করছেন। এ সময় কানু বারবার তাকে ছেড়ে দেওয়ার আকুতি জানাচ্ছিলেন।
কৃষক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আবদুল হাই কানু সংগঠনের কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা কমিটির সাবেক সহসভাপতি। তিনি ঘটনাস্থলের পাশের লুদিয়ারা গ্রামের বাসিন্দা।
ঘটনার পর থেকেই ‘নিরাপত্তাহীনতায়’ মুক্তিযোদ্ধা গ্রাম ছেড়ে ফেনীতে চলে যান। মঙ্গলবার পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়, মঙ্গলবার ফেনীর আদালত চত্বরে এই আইনজীবীর কাছে মামলার এজাহার তৈরি করে বের হয়ে আসার সময় কিছু লোক সেটি ছিনতাই করে নিয়ে যায়। পরে তারা ফেনীর পুলিশ সুপারের কাছে গিয়ে আশ্রয় নেন।
চার দিন পর দায়ের করা মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, সরকার পতনের পর আসামিরা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের লোকজন ও মুক্তিযোদ্ধাদেরকে নানাভাবে হয়রানিসহ হুমকি দিয়ে মোটা অংকের চাঁদা আদায় করে আসছে। আসামিরা গত কয়েক দিন ধরে বাদীর কাছে ২৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে আসছিল। চাঁদা না দিলে বাড়ি থাকতে পারবে না বলেও হুমকি দেয়। চাঁদা দিতে অস্বীকার করায় আসামিরা তার ওপর ক্ষিপ্ত হয় এবং তাকে খুন ও ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়ার হুমকি দেয়।
মামলায় ঘটনার দিনের বর্ণনা দিয়ে বলা হয়, রোববার তিনি স্থানীয় পাতড্ডা বাজারের একটি ফার্মেসিতে বসা ছিলেন। আসামিরা ওই ফার্মেসিতে গিয়ে তাকে টানাহেঁচড়া করে স্থানীয় কুলিয়ারা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একটি কক্ষে নিয়ে জোরপূর্বক আটকে কিল-ঘুষি ও লাথি মেরে মারাত্মক জখম করে।
এ সময় বাদী ওই কক্ষ থেকে বের হয়ে স্কুলের সামনে আসলে আসামিরা কিছু পুরনো জুতা দিয়ে একটি মালা তৈরি করে তার গলায় পড়িয়ে স্কুলের মাঠ ও রাস্তায় হাঁটায়। পরে এলাকার লোকজন তাকে আসামিদের কবল হতে উদ্ধার করে।
এজাহারে বাদী বলেন, এ ঘটনায় তার ১০০ কোটি টাকার সম্মানহানি হয়েছে।
মামলার ব্যাপারে জানতে চাইলে বাদী মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হাই কানু বলেন, মঙ্গলবার ফেনী আদালত ভবনের সামনে থেকে মামলার অভিযোগের কপি ছিনতাই করা হয়। অসুস্থতা ও নিরাপত্তাজনিত কারণে তিনি থানায় যেতে পারেননি। তাই চৌদ্দগ্রামের সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার প্রমথ রঞ্জন চক্রবর্তীর নেতৃত্বে কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা ও আত্মীয়ের মাধ্যমে বুধবার অভিযোগটি থানায় পাঠান।
মুক্তিযোদ্ধার ছেলে যুবলীগ নেতা গোলাম মোস্তফা ভূঁইয়া বিপ্লব বলেন, “যার নেতৃত্বে ঘটনা সেই আবুল হাশেমসহ অন্য আসামিরা এখনো গ্রেপ্তার হয়নি। ঘটনার পর থেকে ফেনীতে গিয়েও বাবাকে নিয়ে শঙ্কার মধ্যে আছি। যে কোনো সময় আবারো হামলা হতে পারে।”
চৌদ্দগ্রাম থানার ওসি এ টি এম আক্তার-উজ জামান জানান, মামলার এজাহারনামীয় আসামিদের গ্রেপ্তারে পুলিশের অভিযান অব্যাহত আছে।
এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে সোমবার রাতে অভিযান চালিয়ে উপজেলার বিভিন্ন স্থান থেকে পাঁচজনকে আটক করে পুলিশ। পরে মঙ্গলবার তাদের ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়।
তারা হলেন- উপজেলা বাতিসা ইউনিয়নের কুলিয়ারা গ্রামের আবদুল হক মজুমদারের ছেলে ইসমাইল হোসেন মজুমদার (৪৩), একই এলাকার মৃত সুলতান আহমেদ মজুমদারের ছেলে জামাল উদ্দিন মজুমদার (৫৮), মৃত এছাক ভুইয়ার ছেলে ইলিয়াছ ভুইয়া (৫৮), স্থানীয় মসজিদের ইমাম আবুল কালাম আজাদ (৪৮) এবং চাঁদপুর সদরের মইশাদী গ্রামের মো. জাকির হোসেনের ছেলে ইমতিয়াজ আবদুল্লাহ সাজ্জাদ (১৯)।
এদের মধ্যে শুধু ইসমাইল হোসেন মজুমদারের নাম মামলার আসামির তালিকায় রয়েছে।