নড়াইল সদর উপজেলায় সংরক্ষিত ওয়ার্ডের এক নারী ইউপি সদস্যকে দলবেঁধে ধর্ষণের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এরপর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়েছে।
মৃত ৫২ বছর বয়সী বাসনা মল্লিকের বাড়ি সদর উপজেলার মাইজপাড়া ইউনিয়নের পোড়াডাঙ্গা গ্রামে। তিনি ওই ইউনিয়নের সংরক্ষিত ১, ২, ৩ ওয়ার্ডের নারী সদস্য ছিলেন।
নড়াইল সদর থানার ওসি সাজেদুল ইসলাম জানান, বৃহস্পতিবার রাতে যশোর জেনারেল হাসপাতালে ওই ইউপি সদস্যের মৃত্যু হয়। সেখানে ময়নাতদন্ত শেষে শুক্রবার বিকালে গ্রামের বাড়িতে তার শেষকৃত্য হয়।
এ ঘটনায় শনিবার বেলা ১১টার দিকে একই উপজেলার দৌলতপুর গ্রামের ফারুক হোসেনকে (৬০) মাগুরা থেকে আটক করেছে পুলিশ।
এ ঘটনায় একই গ্রামের রজিবুল নামে আরেক নামও এসেছে। ঘটনার পর থেকে তিনি পলাতক থাকায় তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
যশোর জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) বজলুর রশীদ বলেন, “প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, ওই নারীকে ধর্ষণ করে বিষ খাওয়ানো হয়েছে। তার শরীরে ধর্ষণের ক্ষত ছিল; আলামতও সংগ্রহ করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, “এছাড়া ওই নারীর পেটে বিষ পাওয়া গেছে। ময়নাতদন্ত করা হয়েছে। ভিসেরা প্রতিবেদন হাতে এলে বিস্তারিত বলা যাবে।”
ভুক্তভোগীর পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত ২৪ ডিসেম্বর টিসিবির পণ্য দিতে মাইজপাড়া ইউনিয়ন পরিষদে যান বাসনা মল্লিক। সেখানে কাজ শেষে নিজ বাড়ি মাইজপাড়ার পোড়াডাঙ্গা গ্রামে ফেরার পথে পাশের দৌলতপুর গ্রামের রজিবুলের ফোন পেয়ে তার কাছে পাওনা ১০ হাজার টাকা আনতে সেখানে যান। পরে দৌলতপুর গ্রামের একটি বাড়িতে নিয়ে রজিবুল ও তার সহযোগী ফারুক বাসনাকে ধর্ষণ করে। এ ঘটনার পর থেকে রজিবুল ও ফারুক পালিয়ে যায়।
সেদিন রাত ৮টার দিকে বাসনা বাড়ি ফিরে খাবার খাওয়ার পর বমি শুরু করেন। এরপর তার অসুস্থতা বেড়ে গেলে পরদিন দুপুরে তাকে যশোর জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে দুদিন চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি।
বাসনা মল্লিকের ছেলে রিংকু মল্লিক বলেন, “পাওনা টাকা দেওয়ার কথা বলে রজিবুল মোবাইল ফোনে আমার মাকে দৌলতপুর গ্রামে একটি বাড়িতে ডেকে নিয়ে যায়। আমার মায়ের সঙ্গে যারা এসব করছে, আমি তাদের বিচার চাই।”
রিংকুর স্ত্রী বলেন, “মঙ্গলবার রাতে বাড়িতে এসে আমার শাশুড়ি বমি করেন। অবস্থা খারাপ হলে বুধবার দুপুরে যশোর হাসপাতালে ভর্তি করি। অনেক চেষ্টার পরও তাকে বাঁচানো গেলো না।”
মাইজপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সফুরা খাতুন বলেন, “মঙ্গলবার ইউপি কার্যালয়ে আমাদের সঙ্গে দাপ্তরিক কাজ করেন বাসনা মল্লিক। পরেরদিন পরিষদে না আসায় খোঁজ নিয়ে জানতে পারি তার জ্বর হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাতে জানতে পারি তার অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে। সঠিক তদন্তের মাধ্যমে বাসনা মল্লিকের মৃত্যুর রহস্য উদঘাটন হবে বলে আশা করছি।”
ওসি সাজেদুল ইসলাম বলেন, “বাসনা মল্লিক বিষপান জনিত কারণে মারা গেছেন বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। এছাড়া তার ওপর যৌন হয়রানিরও ঘটনা ঘটেছে বলে শুনেছি। এই বিষয়গুলো সামনে রেখে মৃত্যুর বিষয়টি অধিকতর তদন্ত করা হচ্ছে।”
তিনি বলেন, “এ ঘটনায় ফারুক হোসেন নামে এক জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আর রজিবুল পলাতক রয়েছেন।”
ভুক্তভোগী পরিবারের পক্ষ থেকে মামলা হলে অভিযোগ তদন্ত করে আইনানুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান এ পুলিশ কর্মকর্তা।