ফাইল ছবি
রাজধানীর গুলশানের একটি ফ্ল্যাট থেকে কলেজছাত্রী মোশাররাত জাহান মুনিয়ার লাশ উদ্ধারের ঘটনা মনে আছে নিশ্চয়ই। তিন বছরের বেশি সময় পর নতুন মোড় নিতে যাচ্ছে ওই ঘটনায় দায়ের করা হত্যা মামলা। শুরু থেকেই অভিযোগ ছিল বিভিন্ন প্রভাব ঘটনাটি ধামাচাপা দিয়েছেন বসন্ধুরা গ্রুপের এমডি সায়েম সোবহান আনভীর। সেই অভিযোগ তুলে মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদনে মুনিয়ার স্বজন ও আইনজীবীরা নারাজি আবেদন করেছেন। আদালত তা গ্রহণ করেছেন।
মুনিয়ার আইনজীবী ও স্বজনদের অভিযোগ, হত্যা মামলায় সুরতহাল ও ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন উপেক্ষা করা হয়েছে। সেই সঙ্গে আসামি পক্ষ প্রভাব খাটিয়ে মামলার তদন্ত প্রতিবেদন পাল্টে দিয়েছে। তাদের দাবি, মামলার প্রধান আসামি সায়েম সোবহান আনভীরসহ অন্যদের বাঁচাতে আসল ঘটনা ধামাচাপা দিতেই মুনিয়া হত্যার ঘটনাকে আত্মহত্যা সাজিয়ে মামলা থেকে তাদের অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
মুনিয়া হত্যায় বসুন্ধরা গ্রুপের আনভীর ওতপ্রোতভাবে জড়িত বলে দাবি করেছেন আইনজীবী সরোয়ার হোসেন। সুরতহাল ও ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনের বেশ কিছু বিষয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ দুটি প্রতিবেদন পর্যালোচনা করলেই মুনিয়াকে হত্যার ঘটনার ভয়াবহ তথ্য বেরিয়ে আসে। মুনিয়ার স্বজনরাও একই দাবি করেন।
২০২১ সালের ২৬ এপ্রিল রাতে ঢাকার গুলশানের একটি ফ্ল্যাট থেকে গলায় ওড়না প্যাঁচানো অবস্থায় মুনিয়ার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। সেই রাতেই আত্মহত্যার প্ররোচনার অভিযোগ এনে আনভীরের বিরুদ্ধে গুলশান থানায় মামলা করেন মুনিয়ার বোন নুসরাত জাহান তানিয়া।
ওই বছরের ১৯ জুলাই সেই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গুলশান থানার ওসি আবুল হাসান ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেন। তাতে তিনি আনভীরকে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেওয়ার আবেদন করেন। সেই প্রতিবেদনে নারাজি দিয়ে পুনঃতদন্তের আবেদন করেন বাদীপক্ষের আইনজীবী এবং আদালত সেই আপিল গ্রহণ করেন।
মামলার রিটকারী আইনজীবী সরোয়ার হোসেন জানান, মোশাররাত জাহান মুনিয়াকে বিয়ের আশ্বাস দিয়ে ২০১৯ সালের জুন থেকে ২০২০ সালের এপ্রিল পর্যন্ত বনানীর একটি বাসায় রেখেছিলেন আসামি আনভীর। এরপর ১ মার্চ থেকে খুন হওয়ার আগ পর্যন্ত গুলশানের একটি ফ্ল্যাটে রাখেন। বিভিন্ন সূত্রে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গুলশানের বাসায় আনভীর ছাড়া অন্য কেউ ঢুকতে পারতেন না।
এই আইনজীবী বলেন- ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মুনিয়ার শরীরে পুরুষের বীর্য পাওয়া গেছে। তার মানে তাকে মৃত্যুর আগে ধর্ষণ করা হয়েছে। সেই বীর্য আনভীরের, কারণ সিসিটিভি ফুটেজ ও দারোয়ানের কথা অনুযায়ী সেই বাসায় আনভীর ছাড়া কেউ যেতে পারতেন না। আরও ভয়ংকর তথ্য হলো, মেয়েটা তিন সপ্তাহের অন্তঃসত্তা ছিল। তার মানে এটা দুইজনকে হত্যা করা। একদিনের ভ্রুণও যদি হত্যা করা হয়, সেটাও একটা হত্যাকাণ্ড।
এসব তথ্য গুলশান থানা ও পিবিআইয়ের দুই তদন্তেই এসেছে বলে দাবি করেন আইনজীবী সারোয়ার হোসেন। তিনি তদন্তে বেরিয়ে আসা তথ্যই বলে, এই মামলা সাজানো হয়েছে। এত কিছুর পরও চূড়ান্ত প্রতিবেদনে আসামিদের অব্যাহতির আবেদন মানে, আসামিরা প্রভাব খাটিয়েছে।