শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরে (ডিআইএ) সহকারী শিক্ষা পরিদর্শক মোহাম্মদ ওয়ায়েছ আলকারনী মুন্সীকে গুলি করে হত্যার হুমকির অভিযোগ পাওয়া গেছে। হুমকির ঘটনায় ভুক্তভোগী শাহবাগ থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন। এ ঘটনা তদন্তে কমিটিও গঠন করেছে ডিআইএ কর্তৃপক্ষ।
ডিআইএ সূত্র বলছে, অভিযুক্ত মনিরুল আলম মাসুম একই দপ্তরে সহকারী শিক্ষা পরিদর্শক পদে কর্মরত। গত ২৪ অক্টোবর হত্যার হুমকির ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যের কমিটি করে ডিআইএ পরিচালক। কমিটির আহ্বায়ক করা হয় ডিআইএ-এর সদ্য সাবেক উপ-পরিচালক অধ্যাপক ড. রেহেনা খাতুনকে। আর কমিটি সদস্য করা হয়েছে সহকারী শিক্ষা পরিদর্শক মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম ও শিক্ষা পরিদর্শক মো. মকবুলার রহমানকে।
অভিযোগের বিষয়ে বক্তব্য জানতে মনিরুল আলম মাসুমকে একাধিকবার ফোন দেওয়া হলেও তিনি সাড়া দেননি। পরে অফিসে গিয়েও তার সাক্ষাৎ পাওয়া যায়নি।
ডিআইএ-এর প্রধান কাজ স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন দপ্তর বা সংস্থা পরিদর্শন এবং নিরীক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করা। পরিদর্শন শেষে প্রতিবেদনে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের আর্থিক ও প্রশাসনিক অনিয়ম, দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনা তুলে ধরার পাশাপাশি ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করা হয়। এর ভিত্তিতে ব্যবস্থা নিয়ে থাকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
সূত্র আরও বলছে, গুলি করে মারার হুমকি দেওয়ায় গত ২৯ অক্টোবর শাহবাগ থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছেন মোহাম্মদ ওয়ায়েছ আলকারনী মুন্সী। যার নম্বর ১৯০৮।
সাধারণ ডায়েরি দায়ের এবং গুলি করে মারার হুমকির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মোহাম্মদ ওয়ায়েছ আলকারনী মুন্সী। বলেন, এ ঘটনায় শাহবাগ থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছি। কর্তৃপক্ষও তদন্ত কমিটি করেছে। আশা করি, আমি ন্যায় বিচার পাব।
এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ডিআইএ-এর একাধিক কর্মকর্তা জানান, তদন্ত কমিটি গঠনের পর থেকেই ঘটনা ধামাচাপা দিতে নানা জায়গা থেকে তদবির শুরু করেন মনিরুল আলম। তাই তদন্ত কমিটি গঠন হলেও কমিটি পুরোদমে কাজই শুরু করেনি। আর সম্প্রতি কমিটির আহ্বায়ক রেহেনা খাতুন রংপুর কারমাইকেল কলেজে উপাধ্যক্ষ পদে বদলি করা হয়েছে। এরপর থেকে থমকে আছে কমিটির যাবতীয় কার্যক্রম।
জানা যায়, সাধারণ ডায়েরিতে মোহাম্মদ ওয়ায়েছ আলকারনী মুন্সী লিখেছেন-গত ২২ অক্টোবর বিকেল ৪টার দিকে অপ্রাসঙ্গিকভাবে সহকারী শিক্ষা পরিদর্শক মনিরুল আলম মাসুম বলতে থাকেন–‘কারনী তুমি কামরুন ও সাদিয়াকে বদলি করে দাও। জবাবে বলি, আমি বদলি করার কে? পরক্ষণে বলা তিনি বলেন, আমাকে এবং অপর সহকারী শিক্ষা পরিদর্শক সাদিয়া সুলতানাকে বদলি না করে তিনি শান্তি পাচ্ছেন না। তারপর বলেন, কারনী তোমারে গুলি কইরা দিমু!। তুমি জানো না আমি তোমার প্রতি কত ক্ষ্যাপা! তোমারে আমি ছাড়মু না। তোমাদের একটারেও ছাড়মু না। প্রত্যেকটারে গুলি করমু। পিঁপড়ার মতো মারমু। সব কয়টারে গুলি কইরা মারুম।’
ডিআইএ সূত্র বলছে, ২০০৯ আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে শিক্ষা প্রশাসনে ক্ষমতাধর ব্যক্তি হয়ে ওঠেন সাবেক ছাত্রলীগ নেতা মনিরুল আলম মাসুম। ২০১৬ সালে তিনি পদায়ন পান শিক্ষার লোভনীয় পদায়ন হিসেবে বিবেচিত ডিআইএ-তে। এরপরই ডিআইএ-এর তদন্তের ট্যুর নিয়ন্ত্রণ, টাকার বিনিয়মে তদন্ত প্রতিবেদন পরিবর্তন, শিক্ষা ক্যাডারে বদলি বাণিজ্য শুরু করেন মাসুম। সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের ঘনিষ্ঠ হিসেবে নিজেকে পরিচয় দিতেন তিনি।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির পদধারী নেতা ছিলেন মনিরুল আলম মাসুম। ছাত্রলীগের বাহাদুর বেপারি-অজয় কর খোকন কমিটির সহ গ্রন্থাগার ও প্রকাশনা সম্পাদক দিলেন তিনি। গত ১১ নভেম্বর চকরিয়া সরকারি কলেজের একটি কর্মশালায় গিয়ে ঘুষ চাওয়ার অভিযোগে ছাত্র-জনতার হাতে গণপিটুনির শিকারও হন আলোচিত এ কর্মকর্তা।
গত ৪ আগস্ট মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) মূল ফটকের সামনে অবস্থান নিয়ে কোটা আন্দোলনকারী ছাত্র-জনতাকে উদ্দেশ্য করে নানা ধরনের স্লোগান দিতে দেখা গিয়েছিল ২৪তম বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারের এই কর্মকর্তাকে। তবে ৫ আগষ্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলে রাতারাতি ভোল পাল্টে ফেলেন মনিরুল আলম। পরে ছাত্র দলের কয়েক নেতাকে নিয়ে ডিআইএ অফিসে মহড়াও দেন তিনি। নিজেকে দাবি করছেন ছাত্রদল নেতা হিসেবে।
সার্বিক বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (কলেজ) মো. রবিউল ইসলাম বলেন, ভয়াবহ ঘটনা। অবশ্যই দোষী ব্যক্তিকে বিধি অনুযায়ী শাস্তির আওতায় আনা হবে।