২৩ ডিসেম্বর ২০২৪ , ৭ পৌষ ১৪৩১ 

শিক্ষা

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের শিক্ষক নেতাই বৈষম্যের শিকার!

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

প্রকাশিত: ১০:৩৩, ১৭ ডিসেম্বর ২০২৪

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের শিক্ষক নেতাই বৈষম্যের শিকার!

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে অগ্রনী ভূমিকা পালন করা শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তা অধ্যাপক কাজী মো. আবু কাইয়ুম

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে অগ্রনী ভূমিকা পালন করা শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তা অধ্যাপক কাজী মো. আবু কাইয়ুম আবারও বৈষম্যের শিকার হয়েছেন। নিয়মবহির্ভূতভাবে তাকে ময়মনসিংহের মুমিনুন্নিসা সরকারি মহিলা কলেজে বদলি করা হয়েছে। যদিও সে বদলি আদেশ স্থগিত করেছে হাইকোর্ট। আদালতের নির্দেশে তিনি আবারও পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরে (ডিআইএ) পরিচালক পদে যোগদান করেছেন।

এর আগে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে অধ্যাপক কাইয়ুম বারবার নির্যাতন ও বৈষম্যের শিকার হয়েছিলেন। আওয়ামী লীগ সরকার সিনিয়র এই কর্মকর্তাকে বিগত ১৫ বছর ঢাকার বাইরে প্রত্যন্ত অঞ্চলে শাস্তিমূলক বদলি করেছিল। এছাড়া দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) মিথ্যা অভিযোগ দিয়েও হয়রানি করেছিল। পরে অবশ্য দুদক তার বিরুদ্ধে দায়ের করা অভিযোগের সত্যতা পায়নি।

৫ আগষ্ট ক্ষমতার পরির্বতনের পর গত ২৪ আগষ্ট কাজী মো. আবু কাইয়ুমকে শিক্ষামন্ত্রনালয়ের অধীন ডিআইএ-এ পরিচালক পদে পদায়ন দেয় অর্ন্তবর্তী সরকার। কিন্তু অদৃশ্য শক্তির ইশারায় শিক্ষামন্ত্রনালয়ের উচ্চ পর্যায়ের অনুমতি ছাড়াই গত ২১ নভেম্বর তাকে ময়মনসিংহের মুমিনুন্নিসা সরকারি মহিলা কলেজে বদলি করা হয়। যদিও এ বদলির আদেশ স্থগিত করে হাইকোর্ট।

শিক্ষামন্ত্রণালয় সূত্র বলছে, অধ্যাপক কাজী মো. আবু কাইয়ুম-এর বদলির আদেশ বাতিল করার জন্য গত ১১ ডিসেম্বর নির্দেশ দেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিশেষ সহকারি (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. এম আমিনুল ইসলাম। কিন্তু ‘অদৃশ্য’ কারণে সে নির্দেশ এখনো বাস্তবায়ন করেনি শিক্ষামন্ত্রণালয়।

সূত্র আরও বলছে, অধ্যাপক কাইয়ুমের বদলির আদেশ হাইকোর্টে স্থগিত হলেও নিয়মবহির্ভূতভাবে সে রায়ের বিরুদ্ধে আপিলের জন্য এটর্নি জেনারেল অফিসকে অনুরোধ করেন শিক্ষামন্ত্রণালয়ের ‘অতিউৎসাহী’ এক কর্মকর্তা। যদিও বিষয়টি নিয়ে লিখিত আপত্তি জানান প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারি (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. এম আমিনুল ইসলাম। এ সংক্রান্ত এক আবেদনে তিনি লেখেন- ‘আমি ইতোমধ্যে এ বদলী বাতিলের নির্দেশ দিয়েছি বিধায় সরকারের পক্ষে এ মামলা পরিচালনা করার প্রয়োজন নেই।’       

শিক্ষাক্যাডারের অন্তত ১০ জন কর্মকর্তা জানান, ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামীলীগ সরকার অধ্যাপক কাইয়ুমকে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে বদলিসহ নানা ভাবে হয়রানি করেছিলেন। এ কর্মকর্তা  বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সামনের সম্মুখ সারির একজন যোদ্ধা। নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তিনি ছাত্র-জনতার আন্দোলনে সরাসরি অংশগ্রহণ করেন এবং সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। এছাড়া বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার জীবনী নিয়ে লেখা ‘খালেদা জিয়া: অ্যা বায়োগ্রাফি অব ডেমোক্রেসি’সহ বহু গ্রন্থের লেখকও তিনি।

ডিআইএ সূত্র বলছে, দায়িত্ব গ্রহণের পর পরই অধ্যাপক আবু কাইয়ুম অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেন। নিরপেক্ষভাবে তদন্তভার প্রদানসহ নিতে থাকেন নানা পদক্ষেপ। যা পছন্দ হয়নি ডিআইএ-এর অসাধু কর্মকর্তাদের। এজন্য তাকে সরাতে মরিয়া হয়ে ষড়যন্ত্র শুরু করে তারা।

সূত্র আরও বলছে, অধ্যাপক আবু কাইয়ুম দায়িত্ব গ্রহণের পর তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার জন্য ২০ দিন নির্ধারণ করেন। এতে ডিআইএ কর্মকর্তাদের ঘুষ বাণিজ্য অনেকটাই কমে যায়। এতে ক্ষিপ্ত হন ডিআইএ যুগ্ম পরিচালকসহ অসাধু কর্মকর্তারা।  

এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ডিআইএ কর্মকর্তা জানান, ডিআইএ-এর যুগ্ম পরিচালক মো. আবুয়াল কায়সারসহ কয়েক অসাধু কর্মকর্তা এসব সিদ্ধান্ত ভালোভাবে নেননি। এজন্য তিনি শিক্ষামন্ত্রণালয়ের এক যুগ্ম সচিবকে সঙ্গে নিয়ে ষড়যন্ত্র শুরু করেন। কখনো বেনামে দুদকে চিঠি দেন, কখনো বেনামে শিক্ষামন্ত্রণালয়ের চিঠি দেন।

তারা আরও জানান, অধ্যাপক কাইয়ুম হাইকোর্টের আদেশে ডিআইএ-তে যোগদান করলেও তাকে নানাভাবে হয়রানি করছেন ডিআইএ যুগ্ম পরিচালক আবুয়াল কায়সার। তিনি পরিচালক পদে বরাদ্দ দেওয়া গাড়ি নিজেই ব্যবহার করছেন। নিয়ম অনুযায়ী পরিচালক পদে যোগদান করার পরও অধ্যাপক কাইয়ুমকে গাড়ি ব্যবহার করতে দিচ্ছেন না।

ডিআইএ সূত্র বলছে, টাঙ্গাইলের একটি কলেজের অধ্যক্ষকে তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়ে জানাতে ফোনে ‘চায়ের দাওয়াত’ দিয়েছেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) যুগ্ম পরিচালক মো. আবুয়াল কায়সার। এই ‘দাওয়াতে’ সাড়া না দেওয়ায় অধ্যক্ষকে অশালীন কথা বলার ও দেখে নেওয়ার হুমকি দেওয়ার অভিযোগও উঠেছে।

সার্বিক বিষয়ে বক্তব্য জানতে চাইতে শিক্ষা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদকে একাধিকবার ফোন ও এসএমএস দেওয়া হলেও তিনি সাড়া দেননি।