বিদ্রোহীদের তুমুল আন্দোলনের মুখে বাংলাদেশের শেখ হাসিনার মতোই পতন হয়েছে সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদ। বিমানে করে রাশিয়ায় পালিয়ে প্রাণে বেঁচেছেন তিনি। অথচ তার ছিল অন্তত ৩ লাখ সদস্যের বিশাল সেনাবাহিনী। আসাদের যখন পালিয়ে যাওয়ার মতো পরিস্থিতি হয়েছিল, তখন কী করছিল তারা? তারা কেন প্রেসিডেন্টকে রক্ষায় এগিয়ে আসেনি?
এই উত্তর জানার আগে চলুন জেনে নেই বাশার আল আসাদের প্রেসিডেন্ট হওয়ার গল্প। ২০০০ সালে সিরিয়ার প্রেসিডেন্টের সিংহাসনে বসেন বাশার। তার আগে তাঁর বাবা হাফিজ় আল আসাদ দীর্ঘ দিন ওই কুর্সিতে ছিলেন। ১৯৭০ সালে সিরিয়ায় একটি অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসেন তিনি। তার পর থেকে একনায়কের মতোই সিরিয়া শাসন করেছে আসাদ পরিবার। একের পর এক বিদ্রোহ, গণহত্যা এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রচুর অভিযোগ উঠেছে।
সব ক্ষেত্রেই আসাদ পরিবারকে রক্ষায় ঢাল হয়ে দাঁড়িয়েছে অনুগত সেনাবাহিনী। বাবার মৃত্যুর পর বাবার প্রদর্শিত পথে হেঁটেছেন বাশারও। গত ১৩ বছর ধরে কড়া হাতে যাবতীয় বিদ্রোহ দমন করেছে বাশারের প্রশাসন, আর তাঁর দুর্গ রক্ষা করেছে তিন লাখ সেনা।
২০১১ সাল থেকে বাশার সরকারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ শুরু করেন সাধারণ মানুষ। শুরু হয় সিরিয়ার গৃহযুদ্ধ। প্রথম থেকেই এই যুদ্ধে বিদ্রোহীদের সমর্থন করেছিল আমেরিকা। অন্য দিকে, সিরিয়া সরকারের পাশে দাঁড়ায় বন্ধু রাশিয়া এবং ইরান। কিন্তু গত ২৭ নভেম্বর থেকে পাশা উল্টোয়। রাজধানী দামাস্কাসের পাশাপাশি একের পর এক শহর চলে যায় বিদ্রোহীদের দখলে।
আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলোর দাবি, প্রায় বিনা বাধাতেই রাজধানী দখল করে নিয়েছেন বিদ্রোহীরা। মিত্র দেশগুলিও বিভিন্ন সমস্যায় জর্জরিত থাকায় প্রয়োজনীয় সাহায্যও পাননি বাশার। ফলে বিদ্রোহীদের আগ্রাসনের মুখে কোনো প্রতিরোধই গড়ে তুলতে পারেনি তার বাহিনী। রণে ভঙ্গ দিয়ে পালায় বাশারের তিন লাখ সেনা। আসাদদের দুর্গের দখল নেয় বিদ্রোহী জনতা।
মাত্র দুই সপ্তাহেরও কম সময়ের মধ্যেই যবনিকা পতন হল ৫৪ বছরের স্বৈর-শাসনের। ১৩ বছরের চেষ্টায় যা হয়নি, মাত্র ১২ দিনেই তা করে দেখালেন বিদ্রোহীরা। তার জের ধরে পলাতক সিরিয়ার সেনাবাহিনীর তিন লাখ সৈন্য। কী হবে তাদের পরিণতি, তা সময়ই বলে দেবে। তবে বাশারের পতনের সঙ্গে সঙ্গে সিরিয়ায় এক দশকেরও বেশি সময় ধরে চলে আসা গৃহযুদ্ধ শেষ হবে বলে আশাবাদী দেশটির জনগণ।