৪৩তম বিসিএসের চূড়ান্ত প্রজ্ঞাপনে বাদ পড়া ২২৭ জন প্রার্থী ‘সাময়িক অনুপযুক্ত’ হয়েছেন ‘গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদন বিবেচনায়’। যাদের পুনর্বিবেচনার আবেদন করার সুযোগ রয়েছে বলে জানিয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।
আজ বৃহস্পতিবার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় বাদ পড়া প্রার্থীদের বিষয়ে আনুষ্ঠানিক অবস্থান তুলে ধরে বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য দিয়েছে। এতে স্বাক্ষর করেন মন্ত্রণালয়ের নব নিয়োগ শাখার সিনিয়র সহকারী সচিব উজ্জল হোসেন।
সরকারি কর্ম কমিশন-পিএসসির সুপারিশ থেকে ৪৩তম বিসিএসে উত্তীর্ণ মোট ২১৬৩ জন প্রার্থীর মধ্যে চূড়ান্ত প্রজ্ঞাপনে গত বুধবার মোট ১৮৯৬ জনকে নিয়োগ দেয় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। এতে করে বাদ পড়েন ২৬৮ জন, যাদের মধ্যে ৪০ জন স্বাস্থ্য পরীক্ষায় উপস্থিত হননি।
জানতে চাইলে সিনিয়র সহকারী সচিব উজ্জল হোসেন বলেন, এ বিসিএসের উত্তীর্ণতের মধ্যে এনএসআই ও ডিজিএফআইয়ের প্রাক-চরিত্র প্রতিবেদনে বিরূপ মন্তব্যের কারণে ২২৭ জন প্রার্থীকে সাময়িকভাবে নিয়োগের জন্য অনুপযুক্ত বিবেচনা করা হয়েছে। আর ৪০ জন প্রার্থী স্বাস্থ্য পরীক্ষায় অনুপস্থিত ছিলেন।
তিনি আরও বলেন, প্রাক-চরিত্র প্রতিবেদনে বিরূপ মন্তব্যের কারণে যাদের সাময়িকভাবে নিয়োগের জন্য অনুপযুক্ত বিবেচনা করা হয়েছে তাদের কেউ পুনর্বিবেচনার আবেদন করলে তা গ্রহণ করা হচ্ছে এবং পুনর্বিবেচনার আবেদন করার সুযোগ সবার জন্য খোলা আছে।
২০২০ সালের ৩০ নভেম্বর আবেদনের জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা এ বিসিএসের সব প্রক্রিয়া শেষে ২০২৩ সালের ২৬ ডিসেম্বর নিয়োগের সুপারিশ করে চূড়ান্ত ফল প্রকাশ করেছিল পিএসসি।
বৃহস্পতিবার বিজ্ঞপ্তিতে মন্ত্রণালয় বলছে, ২০২৪ সালের ২৫ জানুয়ারি এ বিসিএসের মাধ্যমে বিভিন্ন ক্যাডারে নিয়োগের জন্য সাময়িকভাবে ২১৬৩ জন প্রার্থীকে মনোনীত করে পিএসসি চিঠি দেয়। তাদের মধ্য থেকে স্বাস্থ্য পরীক্ষায় অনুপস্থিত ৪০ জন এবং এজেন্সি রিপোর্ট বিবেচনায় সাময়িকভাবে ৫৯ জনসহ মোট ৯৯ জনকে বাদ দিয়ে গত ১৫ অক্টোবর নিয়োগের প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছিল।
আরও বলা হয়, প্রজ্ঞাপন জারির পর থেকে বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে এ নিয়োগের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উত্থাপন করা হয়। সব সমালোচনার ঊর্ধ্বে থেকে ক্লিন ইমেজের প্রার্থী নির্ধারণে এবং সরকারি নিয়োগ প্রক্রিয়ায় আস্থা ও বিশ্বাস পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করাতে ৪৩তম বিসিএসের সুপারিশ করা ২১৬৩ জন প্রার্থীর বিষয়ে রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা এনএসআই এবং ডিজিএফআইয়ের মাধ্যমে প্রাক-চরিত্র পুনরায় অধিকতর যাচাই-বাছাইয়ের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
মন্ত্রণালয় বলছে, এনএসআই ও ডিজিএফআই থেকে ২১৬৩ জন প্রার্থীর বিষয়ে প্রতিবেদন পাওয়া যায়। প্রতিবেদন অনুযায়ী ২২৭ জন প্রার্থীর প্রাক-চরিত্র বিষয়ে বিরূপ মন্তব্য পাওয়া যায়। ২২৭ জন প্রার্থীর বিষয়ে বিরূপ মন্তব্যের কারণে সাময়িকভাবে নিয়োগের জন্য অনুপযুক্ত বিবেচনা করা হয় এবং তাদের বিষয়ে অধিকতর যাচাই-বাছাই ও খোঁজখবর নেওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। স্বাস্থ্য পরীক্ষায় অনুপস্থিত ৪০ জনকে নিয়োগের জন্য অনুপযুক্ত বিবেচনা করা হয়।
এদিকে বুধবার ৪৩তম বিসিএসের চূড়ান্ত নিয়োগের প্রজ্ঞাপনে বাদ পড়া প্রার্থীরা বুধবার আবেদন নিয়ে সচিবালয়ের ফটকে জড়ো হলেও তাদের আবেদন গ্রহণ করা হয়নি।
বৃহস্পতিবার দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বাদপড়া প্রার্থীরা তাদের অন্তর্ভুক্ত করে ৫ জানুয়ারির মধ্যে পুনরায় প্রজ্ঞাপন জারির দাবি জানান।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে মাসুমা আক্তার সিথি বলেন, নিয়োগ বাতিল হওয়ায় এসব প্রার্থী এবং তাদের উপর নির্ভরশীল পরিবার সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন, চরম হতাশাগ্রস্ত এবং দিশেহারা হয়ে পড়েছে।
তিনি আরও বলেন, জুলাই বিপ্লবের পথ ধরে বৈষম্যহীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার যে লক্ষ্য, তা পূরণে মেধা ও যোগ্যতা ভিত্তিক সিভিল সার্ভিসের বিকল্প নেই। কিন্তু আমরা সুপারিশপ্রাপ্ত এবং গেজেট প্রাপ্ত হওয়া সত্ত্বেও পুনঃপ্রকাশিত গেজেটে অজ্ঞাত কারণে অন্তর্ভুক্ত না হওয়া জুলাই বিপ্লবের স্পিরিটের পরিপন্থি।