রূপালি পাখি-পাখিমেঘ
প্রিয় রূপালি পাখি-পাখিমেঘ
তোমার জন্য মিথ্যে আমার বছর গোনা
প্রাচীন ফসলের মাঠে তোমার জন্য কর্ষণ
জমির আলপথ জুড়ে আজও বীজের কষ্ট
সবুজের বুকে লেগে থাকে সূর্যপোড়া দাগ
রূপকথামাঠে আবাদ করি তবু বেদনার শালিধান
তুমি জানো না, ধান-মৌসুমে সবুজ চাষি বাঁশরিয়া
বেগুনি পাতার ছায়ায় সন্ন্যাসী মন প্রত্নশিল্প আকাশ
রূপালি পাখির ডানায় তুষারপাত, চন্দ্রজলের গন্ধ
ও সন্ন্যাসী-সখীবার্তা পানকৌড়িবেলা ডুবে যায়
এখানে জলসিঁড়ি ভেঙে পৃথিবীর সময় এসেছে ফুল টুপটাপ ঘাসে
হৃদয়কে জলঘুমে রেখে তারার কুয়াশায় হারিয়ে যায় সব ভালোবাসা
যবদানা, সরষে, গম, ধানের ক্ষেতে পলল প্রবাহ অপাপবিদ্ধ অধিবাস
আজও বাল্মিকী ঋষির আরণ্যক ত্বক বর্ষামেদুর আনতপ্রবাহ
প্রণয় বিকেল প্রণতির খড়কুটো ভেসে গেছে নীলজল রূপকথায়
ভেসে গেছে রূপ কোহিনূর গলে পড়া সোনার আলোজ্বলা পাহাড়ে
পৃথিবী ছুঁয়ে থাকে ঊনজল- দিগন্তরেখা জুড়ে পোড়াকাঠের গন্ধ
আমি জানি খ্রীস্টপূর্ব দিয়ে কর্ষণ করলেই ক্রুশের ব্যথা মুছে যাবেনা
হিয়োরোগ্লিফিক ছবির ভাষায় লেখা রাজকাহিনি মমির রাজকন্যা
অরণ্য হলেও পত্রালিকা খুঁড়ে দ্রোহপর্বে আর কখনও প্রপাত হবে না
এখানে শুধু বেদনাপ্রবাহকে ছুঁয়ে থাকে দুঃখজল মেঘদূত ঈশ্বর
এখানে মধ্যযুগীয় পোষাকে সারা গায়ে রঙ লাগায় পাথরের ভাস্কর্য
হরিতকী গল্পে পৃথিবী উতল করে, টুপটাপ ঝরে পড়ে রাতের শিশির
আমি যাবো রূপালি পাখি -পাখিমেঘ তোমার শিল্প প্রত্নতত্ত্ব বাড়ি
ইলোরা, অজন্তা, বৈশালী, শ্রাবস্তী পেরিয়ে, তোমার ভালোবাসার বাড়ি
অপরূপ আলো-আঁধারের সেতু দিয়ে, জোছনা-বৃষ্টিতে ভিজেভিজে
মেঘ তারার বিষণ্ণ আকাশ ভেঙে পড়বে তখন তোমার অনুরণিত ঠোঁটে
জল থৈথৈ শিল্পপ্রপাতে পৃথিবীর সব জলধারা এসে মিশে যাবে সুখে
চোখের আলোধারায় ভালোবাসা স্বপ্নজলে শুয়ে থাকবে সারারাত
আহা রূপালি পাখি- পাখিমেঘ নীলমেঘ লিখছে প্রাচীনকাব্য
তোমাকে ভেবে ভেবে বনপাতাঘরে সারারাত আমি ঘুমোতে পারিনা
রৌদ্রদিনের ছায়ার মতো বুকের ভেতর তুমি নির্জন হয়ে মিশে থাকো
মিশে থাকো পড়ন্ত সূর্যের শেষ বেলার রঙের মতো চিরন্তন হয়ে
এই আষাঢ়ে শ্রাবণ অভিমানী নীলজলে তাই ভিজে গিয়েছে সব
ভিজে গিয়েছে মেঘের সংগে মেঘ, আকাশের সংগে আকাশ বৃষ্টিধারায়
ভিজে গিয়েছে রূপালি পাখি -পাখিমেঘ আমার সুগন্ধি অববাহিকায়…
দূরদ্বীপ প্রিয় নীল
দূরদ্বীপ প্রিয় নীল! আটলান্টিক থেকে প্যাসিফিক
তোমার সবুজ বুকে আজ কেন এতো তুষার বৃষ্টি!
অন্টারিও উত্তরে অবারিত ঝর্ণা হাডসন চঞ্চল,
ভিজে গেছে শিশিরের তুষার বালিতে ব্রহ্মকমল।
পাহাড়ি নদীর পথ, জলে বাজে বাঁশি অর্ফিয়ুসের-
আমার স্বপ্নগুলো মেঘলা আকাশে সোনার কাগজে,
ম্যাপলের ঝরে পড়া হলুদ গোলাপি বেদনা রঙে,
সাগর যেখানে নীল অপরাজিতার কাছে চিঠি লিখে।
দূরদ্বীপ প্রিয় নীল! তোমার দেশের বিরহ প্রপাত,
টরকুওয়েন্সি হ্রদ, জলের নূপুর সব জলে আলো।
সব জল ছুঁয়ে আছে ডেইজি, লুপিন, ব্লুবেরি আবেশে।
লুইসির জল দেশে সবুজ পানিতে পাহাড় ঘুমায়।
চর্যাশ্রাবণ চোখে তুমি আমি তারা চিত্রকলায়।
বিপ্রতীপের জলে ভিজেছিল, যুগ, জীবন -বিশ্ব।
ভিজেছিল আমাদের অসাম্যতার পৃথিবী আকাশ।
সার্বভৌম সত্তা বেঁচে থাকে তবু ভুলের বিবরে-
সুরের পূরবী ভরা বুকে কাঁদে, আজো প্রিয় বাংলাদেশ।
দূরদ্বীপ প্রিয় নীল! আমি ফিরে যাবো এই
আষাঢ়েই।
আমার হেমন্ত
হিমঝুরি ফুলের দেশে হেমন্তের চিঠি
শিশিরের পাতা জুড়েই নবান্নের ঘ্রাণ–
মধুগন্ধীপিঠে, শালুকখৈ, এলাচবাতাসা
শখের চুড়ি, বাউলগান, কৃষ্ণবাঁশি রাতভর
নীল কুয়াশা থেকে, হেমন্ত এসে ঢেলে দেয়
খুশির হলুদ, মাঠভরে কৃষকের সোনাধানে
চুনকড়ি, চিত্রা, মহানন্দা, কর্ণঝরা, লোনা
সব জলেই হেমন্তের নরম রোদের চিঠি
ডাহুক, তুলসীগঙ্গা সতী-স্বর্ণামতী ভাটেশ্বরীও
আকুল সুরঢেউ, হেমন্তের শিশির জলকথা
বণিক, বন্দর আর বারাঙ্গনাদের ভালোবাসায়
ব্রাহ্মবৈবর্ত পুরাণও যেন কামরূপে কথা বলে
রঙধনু সূর্যচিত্র খুলে চেয়ে থাকি সারাদিন
মাঠের পর মাঠ, সর্ষের হলুদ ওড়ে আঁচলে
বনমেঘে, শস্য বুনে আমিও হেমন্ত-রূপকথা
আহা হেমন্ত! মৃন্ময়ী- কার্তিক লাবণ্যপ্রভা
মৌর্য-শুঙ্গ-থরপাতা পেরিয়ে এসেছো
বোধনের পর দুর্গাঠাকুর ভাসিয়ে চুপিচুপি
তোমার শিশিরে ভিজেছে বঙ্গ,গৌড়,সমতট,
হরিকেল, চন্দ্রদ্বীপ, রাঢ়, পুণ্ড্র, বারিন্দ্রী
অষ্ট্রিক দ্রাবির মংগোলীয় ভোটচীনীয়আর্য
আরও ডোম, কোল, হাড়ি, চণ্ডাল, শবর,
পুলিন্দ, গন্ধবণিক, কাপালিক এই বাংলায়
তুমি আসো গভীর গহন হতে, আমার হেমন্ত–