২৩ ডিসেম্বর ২০২৪ , ৭ পৌষ ১৪৩১ 

শিল্প ও সাহিত্য

অনুবাদ গল্প

জেনেসিস অ্যান্ড ক্যাটাস্ট্রফি: একটি সত্য গল্প

লেখক: রোয়াল ডাহল, অনুবাদক: সায়মা আক্তার

প্রকাশিত: ১৪:১৮, ২৬ নভেম্বর ২০২৪

জেনেসিস অ্যান্ড ক্যাটাস্ট্রফি: একটি সত্য গল্প

নড়বেন না, সব ঠিক আছে। হ্যা..এভাবেই হেলান দিয়ে শুয়ে থাকুন। এখন আপনার বিশ্রাম দরকার।'—বেশ জোরেই কথাগুলো বলছিলেন। বলছিলেন এমনভাবে যেন অনেক দূর থেকে তাকে কথা বলতে হচ্ছে।
আপনার ছেলে হয়েছে।

কি ?
আপনার একটি ফুটফুটে ছেলে সন্তান হয়েছে। বুঝতে পারছেন না? আপনি ওর কান্না শুনতে পাননি?
ও কি সুস্থ আছে, ডাক্তার সাহেব?  
একদম স্বাস্থ্যবান সন্তানের মা আপনি।
দোহাই আমার, ওকে আমার কাছে নিয়ে আসুন।
একটু পরেই আপনার সন্তানকে দেখতে পাবেন।
ও কি সত্যিই সুস্থ আছে?  
অদ্ভুত! সুস্থ থাকবে না কেন?
তাহলে কান্নার শব্দ পাচ্ছিনা কেন?  
আপনার এখন এসব নিয়ে টেনশন করার সময় না। বিশ্রাম করুন।  
আপনি বলুন আমার সন্তান কেন কাঁদছে না। কিছু হয়েছে কি?
খোদার দোহাই আপনি এভাবে আর উত্তেজিত হবেন না। আমি আশ্বাস দিচ্ছি, আপনার সন্তান সুস্থ আছে।  
ক্লান্ত ভদ্রমহিলার হাত আলতো চেপে ধরে বলেন, আপনার সুস্থ্য সুন্দর ছেলে হয়েছে। কেন আমার কথা বিশ্বাস করছে না?  
তাহলে ওই মহিলা ওখানে কি করছে?
ও কিছু না। আপনার সন্তানের শরীর সাফ করা হচ্ছে। শরীরে পানি দিয়ে রক্ত বা অন্য নোংরা ধুয়ে ফেলা। একটু অপেক্ষা করুন। আপনার ফুটফুটে যুবরাজকে হাজির করা হবে।
আপনি আমাকে ছুয়ে বলুন তো আমার সন্তানের কিছু হয়নি।
হায়রে! আচ্ছা আমি আপনায় ছুয়ে বলছি, এবার বিশ্বাস হলো তো? আপনি আপাতত পেছনে হেলান দিয়ে শুয়ে থাকুন। চোখ বন্ধ রাখুন। এইতো, লক্ষ্মী মেয়ে…
আমি দিনরাত শুধু প্রার্থণা করছি। খোদা আমার এই সন্তানকে তুমি বাঁচিয়ে রাখো।
আপনি এসব অলক্ষুণে কথা কেন ভাবছেন? আপনার সন্তান বাঁচবে। বড় হবে।
কারণ অন্যরা তো বাঁচেনি।
বাঁচেনি মানে?
আমার আগের কোনো সন্তানই বাঁচেনি ডাক্তার মশাই।

ভদ্রমহিলার মুখের ফ্যাকাশে ক্লান্ত ভাবটা এবার স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছিলো। ডাক্তার আগে এমনটা লক্ষ্য করেনি। শহরে তারা নবাগত। এসে উঠেছেন এক হোটেলে। হোটেল মালিকের স্ত্রী-ই তাকে হাসপাতালে নিয়ে এসেছে। ওই মহিলা জানায়, তিন মাস আগে তারা এখানে এসেছে। ভদ্রমহিলার স্বামী বর্ডারের কাস্টম হাউজে চাকরি করে। মহিলা অবশ্য মহিলার স্বামী যে মাদকাসক্ত এ কথাও লুকোলেন না। সামান্য নেশা করেই পশুর মতো আচরণ করে। অনেকটা দাম্ভিক প্রকৃতির। তার বিপরীতে ভদ্রমহিলা বেশ শান্ত, ধর্মভীরু। দেখলেই মনে হয় একরাশ বিষন্নতা সবসময় তাকে গ্রাস করে রাখে। আনন্দের  লেশ মাত্র ওই মুখে দেখতে পাওয়া যায়না। সে স্বামীর তৃতীয় স্ত্রী। প্রথম স্ত্রী বেঁচে নেই। দ্বিতীয়জন নিজেই বিবাহবিচ্ছেদের পথ বেঁছে নিয়েছেন। এসব কথা সত্য নাকি মিথ্যা বলা মুশকিল।

চাদরটা ভদ্রমহিলার গায়ে খানিকটা টেনে দিয়ে ডাক্তার আবার তাকে আশ্বস্ত করার চেষ্টা করে, অযথা দুশ্চিন্তা করছেন। আপনার ছেলে সুস্থ আছে।
আপনার প্রতিবার এই কথাই বলেন। কিন্তু কই! কেউ তো বেঁচে নেই। গত আঠারো মাসে তিনবার মা হয়েছি আমি। একটি সন্তান-ও বেঁচে নেই আমার । আর আপনি বলছেন আমি মিছি মিছি চিন্তা করছি!  
তিনজন সন্তানকে হারিয়েছেন!
হ্যাঁ। চার বছরের সংসারে এ নিয়ে চারবার মা হলাম আমি।

এ কথা শুনেই ডাক্তার হকচকিয়ে উঠলেন। পা দুটো অসার হয়ে আসছে বুঝতে পরে একটু নড়েচড়ে দাঁড়ালেন।
‘একের পর সন্তান হারানোর যে কি যন্ত্রণার সেটা একজন মা ছাড়া কেউ বুঝতে পারে না। আপনিও বুঝতে পারবেন না। ওদের মুখ গুলো এখনো আমার চোখে ভাসে।  গুস্তাভের মুখটা স্পষ্ট দেখতে পাই। মনে হয় যেন ও আমার পাশেই শুয়ে আছে। কি ফুটফুটেই না ছিলো আমার গুস্তাভ । কিন্তু একের পর এক অসুখ লেগেই থাকত। আপনিই বলুন সন্তানকে এভাবে কষ্ট পেতে দেখলে একজন মা কি ঠিক থাকতে পারে। ওদের জন্য আমি কিচ্ছু করতে পারিনি। কিচ্ছু না..’
আমি আপনার কষ্ট বুঝতে পারছি।

ভদ্রমহিলা এবার চোখ খুললেন। বেশি সময়ের জন্য না। লোকটাকে কিছুক্ষণ দেখেই আবার চোখ বন্ধ করলেন।
গুস্তাভের পর আমার একটি মেয়ে হয়েছিলো। ইডা। বড়দিন আসতে আর মাত্র চার মাস বাকি । ইডা চলে যায়। আপনি যদি ইডাকে একবার দেখতেন।
এতো নিরাশ হবেন না। এখন তো আপনার একটি ছেলে হয়েছে।
কি সুন্দর-ই না ছিলো আমার ইডা!
আমি বুঝতে পারছি।

ভদ্রমহিলা কান্নায় ভেঙে পড়ে - আপনি কিভাবে বুঝলেন? আপনি তো ওকে দেখেননি।
আপনার এই ছেলেকে দেখেই বুঝতে পারছি বাকিরা কতো সুন্দর ছিলো। এ কথা বলেই তিনি জানালার কাছে সরে গেলেন। আশপাশে ধূসর ও স্যাঁতস্যাঁতে ভাব। এপ্রিলের বিকেল গুলো যেমন হয়ে থাকে। ওপাশের বাড়িগুলোর ছাদ দেখা যাচ্ছিলো। সবগুলোই লাল রঙের। ছাদ চুয়ে বৃষ্টির বড় বড় ফোঁটা মেঝের টাইলসে আছড়ে পড়ছিলো।
'ইডার তখন দুই বছর। কি মিষ্টি চেহারা! ফ্রক পড়ানো শুরু করেছি। এতো সুন্দর লাগতো যে সারাক্ষণ ওর দিকে তাকিয়ে থাকতাম। কিন্তু এক অজানা আতঙ্ক সবসময় আমাকে তাড়া করত। এই বুঝি কোনো অঘটন ঘটবে। গুস্তাভকে হারিয়ে আমি প্রায় দিশেহারা হয়ে পড়েছিলাম । ইডাকে তাই সবসময় চোখে চোখে রাখতাম। মাঝরাতে ঘুম ভাঙলে হামাগুড়ি দিয়ে ইডার দোলনার কাছে যেতাম। ওর মুখের কাছে কান নিয়ে নিশ্বাসের শব্দ শুনতাম।
অনেক কথা হয়েছে। এবার একটু বিশ্রাম নিন।

ভদ্রমহিলার মুখটা সাদা, ফ্যাকাশে। রক্তশূন্যতা থাকলে যেমনটা দেখায়। সামান্য নীলাভ-ধূসর আভা দেখা যাচ্ছিলো নাক আর মুখের আশেপাশে। ভেজা চুল গুলো কপালের চামড়ার সাথে লেপ্টে রয়েছে।  তিনি বলেই যাচ্ছিলেন - ইডা যখন মারা যায় তখনও আমি সন্তানসম্ভবা। চার মাস চলছিলো। 'এ সন্তান আমি চাই না। ওকে আমি জন্ম দেব না। আর কোনো সন্তানকে আমি হারাতে পারবো না।'- অন্তেষ্টিক্রিয়া শেষে এভাবেই চিৎকার করছিলাম। কিন্তু আমার মাতাল স্বামী! মদের গ্লাস হাতে অতিথিদের সামনে ঘুরে বেড়াচ্ছিলো..  
'তোমার জন্য খবর আছে, ক্লারা, ভালো খবর।' আপনি ভাবতে পারেন ! আমরা সবে আমাদের তিন নম্বর সন্তানের অন্তেষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন করেছি। আর সে মদের গ্লাস হাতে আমাকে বলছে ভালো খবর আছে।
'আজি আমাকে ব্রানাউ বদলি করা হয়েছে। ব্যাগপত্র গুছিয়ে নাও। আমরা আবার নতুন ভাবে সবকিছু শুরু করব। সেখানে নতুন নতুন ডাক্তার থাকবে। কোনো অসুবিধা হবে না।
আপনিই সেই নতুন ডাক্তার, তাই না?  
হ্যাঁ।
আমার খুব ভয় করছে।
ভয়ের কোনো কারণ নেই।
আমার ছেলে কি বাঁচবে ডাক্তার সাহেব?
আবার এ-সব ভাবছেন! এগুলো মাথা থেকে ঝেড়ে ফুলুন ।
আমি পারছি না। নিশ্চয়ই আগের জন্মে কোনো পাপ করেছি। তার শাস্তি পাচ্ছি।
এভাবে ভাববেন না। এগুলো কুসংস্কার।
আপনি জানেন অটোর জন্মের পর আমার স্বামী আমাকে কি বলেছিলো? অটো দোলনায় ঘুমাচ্ছিলো।অটোকে দেখে মাত্রই ও বলে উঠলো, কেন প্রতিবারই এমন ছোট, দূর্বল বাচ্চা জন্ম দিচ্ছো তুমি !
কেউ এমনটা কিভাবে বলতে পারে!
ও অটোকে এমন ভাবে দেখছিলো যেন ও কোনো শিশু নয়। একটি ছোট্ট পোকা। আর বলছিলো, কেন ওরা আর পাঁচটা শিশুর মতো নয়!  র ঠিক তিন দিন পর অটো মারা যায়। সকালে ওর দীক্ষা দেওয়া হলো। আর বিকাল হতে না হতেই ও আমাকে ছেড়ে চলে গেলো। এরপর গুস্তাভ। তারপর ইডা। একে একে সবাই আমাকে ছেড়ে চলে গেলো। আচমকা আমার ঘরটা একদম খালি হয়ে গেলো।
দয়া করে এ-সব ভেবে নিজেকে আর কষ্ট দিবেন না।
এই ছেলেটিও কি আর পাঁচটা নবজাতকের থেকে আকারে ছোট?
হয়তো কিছুটা ছোট। তবে এ নিয়ে এতো উত্তেজিত হওয়ার কিছু নেই। মনে রাখবেন আকারে ছোটরাও অনেক সময় বড় কিছু করে ফেলতে পারে। ফ্রাউ হিটলারের কথাই ভাবুন একবার। আগামী বছর এ-সময় আপনার ছেলে হাঁটতে শুরু করবে। সামনের দিন গুলো নিয়ে ভাবুন।
ভদ্রমহিলা কিছু বললেন না।
আর তারপর দু'বছর হতেই কথা বলতে শুরু করবে। এটাসেটা বলে বলে আপনাকে পাগল করে ফেলবে। কি নাম রাখবেন ভেবেছেন কিছু?
নাম?
হ্যাঁ নাম।
সেভাবে ভাবিনি। তবে ওর বাবা একবার বলেছিলেন, 'যদি ছেলে হয় নাম রাখবো অ্যাডলফাস'।
তাহলে তো এখন থেকে ওকে অ্যাডলফ বলে ডাকতে হবে।
হ্যাঁ, আমার স্বামীর এই নামটি বেশ পছন্দ। ওর নামের সাথে মিল আছে কিনা! অ্যালোইস থেকে অ্যাডলফাস।
বাহ্!
অটোর জন্মের পরও ডাক্তার আমাকে এই প্রশ্নটি করেছিলো। তার মানে অ্যাডলফাসকেও আমি হারাতে চলেছি। আপনি ওকেও একবারে বাপ্তিস্ম করতে যাচ্ছেন। হে ঈশ্বর!—বলেই কাঁদতে শুরু করলে তিনি।

তার কাঁধে হাত রেখে ডাক্তার বললেন- নিজেকে সামলান। এগুলো মনের ভুল। কুসংস্কার। শিশুদের নতুন নতুন নাম শুনতে আমার ভালো। এজন্যই প্রশ্নটা করা। অ্যাডলফাস খুব সুন্দর নাম। আমারও অনেক পছন্দ হয়েছে। ঐ তো.. ওকে নিয়ে আসছে।
শিশুটিকে বুকে জড়িয়ে হোটেল মালিকের স্ত্রী এগিয়ে এলেন। ‘এই যে তোমার সুদর্শন ! তুমি কি ওকে কোলে নিতে পারবে? নাকি তোমার পাশে শুইয়ে দিব’—তিনিও কাঁদছিলেন। আনন্দের কান্না।
শিশুটির গা সাদা পশমি শাল দিয়ে মোড়ানো। গোলাপি মাথাটা দেখা যাচ্ছিলো। মায়ের পাশে শুয়িয়ে দিয়ে তিনি বললেন, ' এই নাও। এবার মন ভরে ছেলেকে দেখো।'
খানিক মৃদু হেসে ডাক্তার বললেন, খুব সুন্দর হয়েছে।
'ওর হাত গুলো কি যে সুন্দর! একদম লম্বা লম্বা সুক্ষ্ম আঙ্গুল!- হোটেল মালিকের স্ত্রী বললেন।
ভদ্রমহিলা একবারের জন্যও পাশ ফিরলেন না।
'দেখো ওকে। ও কি তোমাকে খেয়ে ফেলবে!' - বলেই কান্নায় ভেঙে পড়লেন হোটেল মালিকের স্ত্রী।
' ভয় হচ্ছে আমার। আমার বিশ্বাস করতে ভয় হচ্ছে যে আমার একটি ছেলে হয়েছে। একটি সুস্থ্য,সুন্দর ছেলে।'
'বোকার মতো কথা বলো না।'
পাশ ফিরে ছেলের নির্মল মুখটা দেখে - ' এটা কি আমার ছেলে?'
হ্যাঁ, তোমার ছেলে।
ওহ্..কি সুন্দর!

তিনি টেবিলে পড়া থাকা জিনিস গুলো গুছিয়ে ব্যাগে রাখলেন।ভদ্রমহিলা এবার ছেলেকে কোলে নিলেন। ছেলের হাসি দেখে তার দুশ্চিন্তা কিছুটা কমেছে।
‘ এই অ্যাডলফাস! আমার সোনা অ্যাডলফাস!’
আমার মনে হয় তোমার স্বামী চলে এসেছে- বললেন হোটেল মালিকের স্ত্রী।
ডাক্তার দরজা খুলে করিডোরে তাকাতেই তাকে দেখতে পেলেন।
হের হিটলার?
জ্বি।
আসুন..আসুন ভেতরে আসুন।
গাঢ় সবুজ ইউনিফর্ম পড়া একটা বেঁটে লোক ঘরে ঢুকলো। মুখে লম্বা গোঁফ। অনেকটা সম্রাট ফ্রাঞ্চ জোসেফের আদলে। গায়ে মদের কড়া গন্ধ।
অভিনন্দন, স্যার। আপনার ছেলে হয়েছে।
ছেলে?
জ্বি।
কোথায় সে? কেমন আছে?
আপনার স্ত্রী এবং ছেলে দু’জনেই সুস্থ্য আছেন।
বেশ।
ভদ্রলোক তার স্ত্রীর কাছে গেলেন। ‘ তাহলে ক্লারা, শরীর কেমন এখন?’ খুশি মনে তিনি শিশুটিকে দেখতে লাগলেন। নিচের দিকে ঝুকে দেখতে গিয়ে এতো নিচু হলেন যে শিশুটির মাথা থেকে তার মুখ  মাত্র বারে ইঞ্চি দূরে ছিলো। ভদ্রমহিলা সবটা দেখছিলেন।।
হে ঈশ্বর! আপনি এমনটা কেন করলেন !
কি হলো?  
ও তো অটোর থেকেই ছোট হয়েছে।
ডাক্তার দ্রুত এগিয়ে এসে – ‘উত্তেজিত হবেন না। এটা খুব সাধারণ একটি বিষয়।’
ভদ্রলোক উত্তেজিত হয়ে বললেন – মিথ্যা সান্তনা দেওয়া বন্ধ করুন। আপনি কি জানেন আমার আগের সন্তানদের সাথে ঠিক কি হয়েছিলো ?
আপনি আমার কথা শুনুন। আপনাকে অতীত ভুলতে হবে। এই শিশুটির ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবুন ।
দুর্বলের আবার ভবিষ্যৎ!
স্যার, সে আজ পৃথিবীর আলো দেখেছে ।
তো?
তো কি করতে চাও তুমি। এখনই ওকে মেরে ফেলতে চাও – বলেই আবারও কান্নায় ভেঙে পড়লেন হোটেল মালিকের স্ত্রী।
‘অনেক হয়েছে’ – রেগে গেলেন ডাক্তার্।
ভদ্রমহিলা এবার হাউমাউ করে কেঁদে উঠলেন। তার সারা শরীর কাঁপতে শুরু করে।
তার স্বামীর কাঁধে হাত রেখে ডাক্তার বললেন- ওনাকে সামলান। আপনার উচিত এখন ওনার পাশে থাকা।
ডাক্তার কাঁধ ধরে তাকে বিছানার কাছে ঠেলে দিলেন। বুড়ো আঙ্গুল দিয়ে ইশারা করলেন।ফলে অনিচ্ছা সত্ত্বেও তাকে স্ত্রীর গালে চুমু খেতে হলো।
‘ঠিক আছে, ক্লারা, শান্ত হও এবার।’
‘ আমি ঈশ্বরের কাছে অনেক প্রার্থনা করেছি অ্যালোইস। মাসের প্রত্যেকটা দিন আমি গির্জায় গিয়েছি। হাঁটু গেড়ে ঈশ্বরকে ডেকেছি। বলেছি তিনি যেন ওকে শুধু বাঁচার অধিকার টুটু দেন।’
আমি জানি,ক্লারা।
তিন তিনটে সন্তানকে হারিয়ে আমি কিভাবে বেঁচে আছি সেটা কি তুমি বুঝতে পারছো না?
বুঝতে পারছি, ক্লারা।
‘ওকে বাঁচতে হবে অ্যালোইস। ওকে বাঁচতে-ই  হবে। বাঁচতে-ই হবে..
হে ঈশ্বর, ওকে বাঁচতে দিন ..