১২ মার্চ ২০২৫ , ২৭ ফাল্গুন ১৪৩১ 

জাতীয়

জনপ্রশাসন সংস্কার: বিসিএসে থাকবে ১৩ সার্ভিস, পিএসসি হবে ৩টি

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

প্রকাশিত: ২৩:৩৩, ৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

জনপ্রশাসন সংস্কার: বিসিএসে থাকবে ১৩ সার্ভিস, পিএসসি হবে ৩টি

বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসে (বিসিএস) কাজের ধরণ ও বিশেষায়িত দক্ষতার ভিত্তিতে ১৩টি প্রধান সার্ভিসে ভাগ করার সুপারিশ এসেছে। একই সঙ্গে ‘ক্যাডার’ পদ্ধতি বাতিলের সুপারিশ করা হয়েছে।

ওই ১৩ সার্ভিসে নিয়োগের পরীক্ষা পৃথক তিনটি পাবলিক সার্ভিস কমিশনের অধীনে নেওয়ার সুপারিশ করেছে সংস্কার কমিশন।

১৩ সার্ভিস হবে- প্রশাসনিক, বিচারিক, জননিরাপত্তা, পররাষ্ট্র, হিসাব নিরীক্ষা, রাজস্ব, প্রকৌশল, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, তথ্য এবং তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তি সার্ভিস।

বুধবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের হাতে প্রতিবেদন তুলে দেন জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রধান আবদুল মুয়ীদ চৌধুরী।

পাবলিক সার্ভিস কমিশন পুনর্গঠনের সুপারিশ করে কমিশন বলেছে, বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরে দু'টো পাবলিক সার্ভিস কমিশন গঠন করা হয়েছিল। একটি ক্যাডার সার্ভিসের জন্য এবং অপরটি নন-ক্যাডার সার্ভিসের জন্য। পরে দু'টোকে একীভূত করা হয়।

প্রজাতন্ত্রের জনবল নিয়োগে তিনটি পাবলিক সার্ভিস কমিশন গঠন করার সুপারিশ করে কমিশন বলেছে, প্রতিটি কমিশনের সদস্য সংখ্যা হবে চেয়ারম্যানসহ ৮ জন।

শিক্ষা ও স্বাস্থ্য বাদে অন্য সব সার্ভিসে নিয়োগ ও পদোন্নতি পরীক্ষা নেবে পাবলিক সার্ভিস কমিশন (সাধারণ)।

পাবলিক সার্ভিস কমিশন (শিক্ষা) শুধু শিক্ষা এবং পাবলিক সার্ভিস কমিশন (স্বাস্থ্য) শুধু স্বাস্থ্য সার্ভিসে নিয়োগ ও পদোন্নতির পরীক্ষা নেবে।

প্রশাসনে যাবে খাদ্য ও সমবায়
ক্যাডার সার্ভিস পুনর্গঠনের অংশ হিসেবে বিসিএস (খাদ্য) এবং বিসিএস (সমবায়) সার্ভিসকে বাংলাদেশ প্রশাসনিক সার্ভিসের সাথে একীভূত করার সুপারিশ করে সংস্কার কমিশন বলছে, ভবিষ্যতে এ দু'টো সার্ভিসে নতুন নিয়োগ করা যাবে না।

বিসিএস (হিসাব ও নিরীক্ষা) সার্ভিসকে দু'টো সার্ভিসে বিভক্ত করার সুপারিশ করে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, একটি হবে ‘বাংলাদেশ হিসাব সার্ভিস’ ও আরেকটি হবে ‘বাংলাদেশ নিরীক্ষা সার্ভিস’।

এলজিইডি ও জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর পুনর্গঠনের সুপারিশ করে কমিশন বলছে, “দুটি সংস্থায় কর্মরত প্রকৌশলীদের প্রকৌশল সার্ভিস হিসেবে একীভূত করার জন্য সুপারিশ করা হলো। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের যোগদানের তারিখ থেকে পারষ্পরিক সিনিয়রিটি নির্ধারণ করা হবে।”

বিসিএস সাধারণ তথ্য ক্যাডারের মধ্যকার তিনটি সাব-ক্যাডার একীভূত করার সুপারিশ করেছে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন।

সুপারিশে বলা হয়, এই ৩টি সাব-ক্যাডারে পদোন্নতির সুযোগ-সুবিধার বৈষম্য রয়েছে।

“এরূপ বৈষম্য দূর করার জন্য তিনটি সাব-ক্যাডারকে বিলুপ্ত করে তিনটি গ্রুপের (ক) সহকারী পরিচালক/তথ্য অফিসার/গবেষণা কর্মকর্তা, (খ) সহকারী অনুষ্ঠান পরিচালক, এবং (গ) সহকারী বার্তা নিয়ন্ত্রক পদসমূহ নিয়ে একটি একীভূত সার্ভিস গঠন করার সুপারিশ করা হলো।”

সম্মিলিত মেধা তালিকার ভিত্তিতে তাদের জ্যেষ্ঠতা, পদোন্নতি ও পদায়ন করার সুপারিশ করেছে কমিশন।

আইসিটি কর্মকর্তাদেরকে তথ্য সার্ভিসে অন্তর্ভুক্ত করার সুপারিশ করে কমিশন বলেছে, “সরকারি দপ্তরে আইসিটি সম্পৃক্ত বহু কর্মচারী এখন কাজ করেন। তাদের অনেকেই বেশ মেধাবীও বটে। অনেকে দেশের বাইরে গিয়েও বেশ সাফল্য দেখাচ্ছে। এমতাবস্থায় সরকারি দপ্তরের আইসিটি কর্মকর্তাদেরকে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি সার্ভিসে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য সুপারিশ করা হলো।”

বিসিএস (তথ্য প্রকৌশল) সার্ভিসকে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি সার্ভিসে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য সুপারিশ করা হয়েছে প্রতিবেদনে।

নতুন করে 'বাংলাদেশ বন ও পরিবেশ সার্ভিস' গঠনের যুক্তি তুলে ধরে প্রতিবেদনে বলা হয়, বিসিএস (বন) সার্ভিসের কর্মকর্তারা বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের অধীনে কাজ করেন।

“সময়ের ব্যবধানে জলবায়ু পরিবর্তন ও পরিবেশের বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। তাই বিসিএস (বন) সার্ভিসের কর্মকর্তাদের সাথে পরিবেশ সার্ভিসের কর্মকর্তাদের একীভূত করে বাংলাদেশ কৃষি সার্ভিসের উপ-সার্ভিস হিসেবে ‘বাংলাদেশ বন ও পরিবেশ সার্ভিস’ সংযুক্ত করার জন্য সুপারিশ করা হলো।”

বিসিএস ট্রেড ক্যাডারকে একীভূত করার সুপারিশ করে প্রতিবেদনে বলা হয়, “বিসিএস (ট্রেড) ক্যাডার খুবই ছোট একটি সার্ভিস হওয়ার কারণে একে বিলুপ্ত করে বিসিএস (শুল্ক ও আবগারি)-এর সাথে একীভূত করার জন্য সুপারিশ করা হলো।”

ডব্লিউটিওর টিএফএ প্রভিশনগুলোর ৮০% ভাগের ঊর্ধ্বে কাস্টমস বিভাগ বাস্তবায়ন করার কথা তুলে ধরে বিদেশে বাংলাদেশের কূটনৈতিক মিশনে ট্রেড কাউন্সিলর পদে কাস্টমস সার্ভিস থেকে পদায়নের সুপারিশ করা হয়েছে।
ভবিষ্যতে এ সার্ভিসে নতুন নিয়োগ করা যাবে না বলে জানিয়েছে সংস্কার কমিশন।

ইন্টারনেট, সামাজিক মাধ্যম, কুরিয়ার সার্ভিস ইত্যাদি যোগাযোগের জন্য সহজলভ্য হওয়ায় বিসিএস (ডাক) সার্ভিসের গুরুত্ব অনেকটাই কমে যাওয়ায় এই সার্ভিসের প্রয়োজনীয়তা পরীক্ষা করে দেখার সুপারিশ করেছে কমিশন।