১১ এপ্রিল ২০২৫ , ২৭ চৈত্র ১৪৩১ 

জাতীয়

গরমে স্যুট পরা নিয়ে প্রশ্ন তুললেন বিদ্যুৎ উপদেষ্টার

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

প্রকাশিত: ২১:৪২, ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

গরমে স্যুট পরা নিয়ে প্রশ্ন তুললেন বিদ্যুৎ উপদেষ্টার

গরমকালে স্যুট পরার যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তু্লেছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান। তিনি বলেছেন, “গরমে কেন স্যুট পরতে হবে? গরমকালে স্যুট না পরলে কেউ আনস্মার্ট হয়ে যাবে? স্যুট পরে এসির তাপমাত্রা কম রাখার প্রবণতা থেকে বের হতে হবে।”

শনিবার রাজধানীতে এক কর্মশালায় বিদ্যুৎ পরিস্থিতি তুলে ধরে এ প্রশ্ন তোলেন তিনি। 

বিদ্যুৎ উপদেষ্টা বলেন, “আমরা জ্বালানি সংকটের মধ্যে রয়েছি। তাই বিদ্যুতের অপচয় বন্ধ করতে হবে। এসির তাপমাত্রা কোনোভাবেই ২৫ ডিগ্রির নিচে নামানো যাবে না।”

মালয়েশিয়ায়ও এসির তাপমাত্রা ২৫ ডিগ্রি নির্দিষ্ট করেছে তুলে ধরে তিনি বলেন, “দেশটিতে বিদ্যুতের কোনো অভাব নেই। কার্বন নিঃসরণ কমাতে তারা এই পদ্ধতি অবলম্বন করেছে।”

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সংকট থেকে উত্তরণে মানুষের আচরণ পরিবর্তন করতে হবে বলে মন্তব্য করেন ফাওজুল কবির।

বিগত সরকারের আমলে ‘বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে ব্যাপক দুর্নীতি ও লুটপাট হয়েছে’ দাবি করে ফাওজুল কবির বলেন, “আগের সরকারের সময় প্রতিবছর বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হত। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ব্যাপক চাপ থাকা স্বত্বেও গত ছয় মাসে বিদ্যুতের দাম বাড়ায়নি সরকার।

“বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে ৪২ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিতে হচ্ছে সরকারকে। গ্রাহকরা প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের জন্য সরকারকে দেয় ৮.৯০ টাকা। অথচ সরকার ক্রয় করে ১২ টাকায়।”

‘ভবিষ্যতে যারা নতুন করে লাইনের গ্যাস চাইবেন তাদের বাড়তি দাম দিতে হবে’ তুলে ধরে জ্বালানি উপদেষ্টা বলেন, “আমাদের মনে রাখতে হবে, ৭০ টাকায় গ্যাস কিনে সরকার কম দামে দিতে পারবে না।”

বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ) এর সদস্যদের মাঝে ‘রুফটপ’ সোলার প্রযুক্তিকে উৎসাহিত করতে কর্মশালার আয়োজন করে ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি লিমিটেড-ইডকল।

ইডকল অকার্য্কর ও ব্যর্থ প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে মন্তব্য করে বিদ্যুৎ উপদেষ্টা বলেন, “এর লোকজন কাজ না করে ঢাকায় সভা-সেমিনার নিয়ে ব্যস্ত।”

ইডকল কর্মকর্তাদের প্রকল্প এলাকায় যাওয়ার তাগিদও দেন তিনি।

সরকার ২০৩০ সালের মধ্যে নবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎস থেকে ৪ হাজার ২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য নিরলসভাবে কাজ করছে তুলে ধরে ফাওজুল কবির বলেন, “শিল্প খাতের রুফটপ সোলার প্রযুক্তি জ্বালানি খাতে নিজেদের সক্ষমতা বৃদ্ধি, সর্বোপরি একটি টেকসই অবকাঠামোনির্ভর বাংলাদেশে জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ বলা যায়।

“এই উদ্যোগটি শুধুমাত্র গ্রিড বিদ্যুতের উপর নির্ভরশীলতা কমাবে না, নবায়নযোগ্য শক্তির প্রতি আমাদের প্রতিশ্রুতিকেও বাস্তবায়নে সহায়তা করবে।”

ইডকলের নির্বাহী পরিচালক আলমগীর মোরশেদ বলেন, “নবায়নযোগ্য শক্তি প্রকল্পের অধীনে, ইডকল শুধুমাত্র বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠানকে কম খরচে অর্থায়নই করে না, বরং শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলিকে প্রযুক্তিগত সহায়তা, মানসম্পন্ন সরঞ্জাম ক্রয় এবং সক্ষমতা বৃদ্ধিও প্রদান করে। রুফটপ সোলার উৎস থেকে বাংলাদেশের ৫ হাজার মেগাওয়াটেরও বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে।”

উত্তরায় বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি-বিজিএমইএ মিলনায়তনে এই কর্মশালা শেষে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ইডকল বলেছে, ভবনের ছাদে সৌর বিদ্যুৎ উৎপাদনের খরচ জাতীয় গ্রিড থেকে পাওয়া বিদ্যুতের দামের তুলনায় ‘বেশ সাশ্রয়ী’। সুতরাং, এই ধরনের প্রকল্পে অর্থায়ন দেশের নবায়নযোগ্য জ্বালানি-ভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের পাশাপাশি আর্থিকভাবেও লাভজনক।

কর্মশালায় ঢাকার কেএফডব্লিউ অফিসের পরিচালক মাইকেল সামসের, বিজিএমইএ প্রশাসক আনোয়ার হোসেন ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সচিব ও ইডকলের চেয়ারম্যান শাহরিয়ার কাদের সিদ্দিকী উপস্থিত ছিলেন।