০১ জানুয়ারি ২০২৫ , ১৭ পৌষ ১৪৩১ 

জাতীয়

রক্তে লেখা সংবিধান, কবর দেওয়ার কথা বললে কষ্ট লাগে: মির্জা আব্বাস

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

প্রকাশিত: ২২:৪২, ২৯ ডিসেম্বর ২০২৪

রক্তে লেখা সংবিধান, কবর দেওয়ার কথা বললে কষ্ট লাগে: মির্জা আব্বাস

শহীদের রক্তে লেখা যে সংবিধান তা কবর দেওয়ার কথা বললে কষ্ট লাগে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস।

সংবিধান নিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা হাসনাত আবদুল্লাহর একটি মন্তব্যের প্রেক্ষাপটে এসব কথা বলেন মির্জা আব্বাস।

তিনি বলেছেন, ‘শহীদের রক্তের ওপর দিয়ে লেখা যে সংবিধান, সেই সংবিধানকে যখন কবর দেওয়ার কথা বলা হয়, তখন কিন্তু আমাদের কষ্ট লাগে।’ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা–কর্মীদের উদ্দেশ করে মির্জা আব্বাস আরও বলেন, ‘অনুরোধ করব, বিষয়গুলো বোঝার চেষ্টা করবেন। ভুল বুঝবেন না। কবর দিয়ে ফেলব, মেরে ফেলব, কেটে ফেলব—এ সমস্ত কথা ভালো কথা নয়। এ ধরনের কথা ফ্যাসিবাদের মুখ থেকে আসে।’

আজ রোববার দুপুরে রাজধানীর নয়াপল্টনে একটি কমিউনিটি সেন্টারে গণমাধ্যমের সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়ের এক অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস। এতে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির নবনির্বাচিত নেতা, দক্ষিণ বিএনপির সাবেক নেতারা অংশ নেন।

প্রসঙ্গত, আজ রোববার বাংলামোটরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’–এর মাধ্যমে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগকে ‘নাৎসি বাহিনীর’ মতো ‘অপ্রাসঙ্গিক’ ঘোষণা করার কথা বলেছেন সংগঠনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ। একই সঙ্গে ১৯৭২ সালের সংবিধানকে ‘মুজিববাদী’ সংবিধান হিসেবে তুলে ধরে তার ‘কবর’ রচনা করারও ঘোষণা দিয়েছেন তিনি।

বিএনপির অনুষ্ঠানে মির্জা আব্বাস বলেন, ‘১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে সম্মুখভাগে থেকে অংশগ্রহণ করেছি। ১৯৭১ সালে আমার বহু বন্ধু শহীদ হয়েছে। শহীদের রক্তের ওপর দিয়ে লেখা যে সংবিধান, সেই সংবিধানকে যখন কবর দেওয়ার কথা বলা হয়, তখন কিন্তু আমাদের কষ্ট লাগে।’ এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমরা তোমাদের অগ্রজ হিসেবে কষ্ট পাই। কথাটা এভাবে বলা কি ঠিক হলো! ওই সংবিধানে যদি খারাপ কিছু থাকে, নিশ্চয়ই সেটা বাতিলযোগ্য।’
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের উদ্দেশে মির্জা আব্বাস বলেন, ‘এ ধরনের কথা ফ্যাসিবাদের মুখ থেকে আসে। কবর দিয়ে ফেলব, মেরে ফেলব, কেটে ফেলব, এ সমস্ত কথা ভালো কথা নয়। জাতি তাকিয়ে আছে আপনাদের দিকে। আমরাও তাকিয়ে আছি আপনাদের দিকে। আপনাদের মুখ থেকে এই ধরনের কথা আমরা আশা করি না।’

মির্জা আব্বাস বলেন, ‘যারা ৫ আগস্টের আন্দোলনের স্ফুলিঙ্গ হিসেবে কাজ করেছে, এককভাবে তারা এই আন্দোলনকে নিজেদের করে নিতে চায়। যখন বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলন প্রায় নিভু নিভু, তখন কিন্তু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সামনে এগিয়ে আসে। সাধারণ মানুষ সামনে এগিয়ে আসে। আমরা এগিয়ে যাই। বিএনপির ৪৬২ জন মারা গেছে। নিশ্চয়ই নেতৃত্বে একজন থাকবে। পেছনে হাজারো জন থাকবে। কিন্তু এককভাবে দাবি করা ঠিক না। এতে কিন্তু জনমনে বিভেদ সৃষ্টি হবে; বিদ্বেষ সৃষ্টি হবে।’

সংস্কারের বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, ‘সংস্কারের কথা বলছেন। যতটুকু লাগে করেন। আমাদের কোনো আপত্তি নাই। কিন্তু যথাসময়ে দেশের মানুষের প্রত্যাশা অনুযায়ী নির্বাচন দেবেন। কিন্তু তার আগে আমরা আমাদের অবস্থান থেকে বারবার বলেছি যে হাসিনা চলে গেছে, কিন্তু তার প্রেতাত্মারা রয়ে গেছে। এর ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে মির্জা আব্বাস বলেন, এখনো ফ্যাসিবাদী সরকারের সময়ের আটজন ব্যক্তি সচিব হিসেবে মন্ত্রণালয়ে অবস্থান করছেন। আশ্চর্যজনক বিষয় হলো, এত বিরোধিতার পরও দুই–তিন আগে আরেকজন সাবেক বাকশালী সচিবকে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশে মির্জা আব্বাস বলেন, ‘বাকশালীদের প্রেতাত্মাদের বোগলতলায় রেখে আপনারা কী সংস্কার করবেন? আমরা কি আওয়ামী লীগকে আবার ফিরিয়ে আনার রাস্তা করে দিচ্ছি?’

মতবিনিময় সভায় স্বাগত বক্তব্যে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমিনুল হক বলেন, স্বাধীন সাংবাদিকতায় ভবিষ্যতে হয়রানি করা হবে না। আর ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক ও বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আবদুস সালাম সঠিক সংবাদ প্রচারের জন্য সাংবাদিকদের প্রতি আহ্বান জানান।

মতবিনিময় সভায় আরও বক্তব্য দেন বিএনপির ঢাকা মহানগরীর সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও দলের বাণিজ্যবিষয়ক সম্পাদক সালাহ উদ্দিন আহমেদ, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক কাজী আবুল বাসার, দক্ষিণ বিএনপির বর্তমান আহ্বায়ক রফিকুল আলম (মজনু), বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত ফটোগ্রাফার নুরুদ্দিন আহমেদ প্রমুখ।

ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সদস্যসচিব তানভীর আহমেদের সঞ্চালনায় মতবিনিময় সভায় সাংবাদিকদের মধ্যেও কয়েকজন বক্তব্য দেন। তাঁরা হলেন বাসির জামাল, নাজিয়া আফরিন, রেজা করিম, আহমেদ সালেহীন, মহাসিন হোসেন, কামরুজ্জামান রাজীব, সাইফুদ্দিন রবিন, ফটোসাংবাদিক বাবুল তালুকদার প্রমুখ।

সম্পর্কিত বিষয়: