০৪ জানুয়ারি ২০২৫ , ২০ পৌষ ১৪৩১ 

জাতীয়

‘গোলযোগ’ থেকে সচিবালয়ে আগুন: তদন্ত কমিটি 

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

প্রকাশিত: ২০:০৪, ৩১ ডিসেম্বর ২০২৪

‘গোলযোগ’ থেকে সচিবালয়ে আগুন: তদন্ত কমিটি 

প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র সচিবালয়ে গভীর রাতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছৈ বিদ্যুতের  'লুজ কানেকশনের' কারণে। প্রাথমিক তদন্তে অন্য কিছু বা ব্যক্তির সংশ্লিষ্টতা খুঁজে পায়নি তদন্ত কমিটি।

মঙ্গলবার সন্ধ্যায় তদন্ত কমিটির প্রধান স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব নাসিমুল গনি প্রাথমিক প্রতিবেদন জমা দেওয়ার পর এ তথ্য জানিয়েছেন।

মঙ্গলবার সন্ধ্যায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনার সামনে প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি বলেন, সচিবালয়ের ৭ নম্বর ভবনে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে বিদ্যুতের 'লুজ কানেকশনের' কারণে।

সচিবালয়ে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় তদন্তে গঠিত আট সদস্যের এ তদন্ত কমিটি মঙ্গলবার বিকেল ৫টায় প্রধান উপদেষ্টার কাছে প্রাথমিক প্রতিবেদন জমা দেয়। পরে সন্ধ্যায় তদন্ত কমিটির প্রধান সংবাদিকদের সামনে আসেন।
গত বুধবার গভীর রাতে সচিবালয়ের সাত নম্বর ভবনে আগুন লেগে ষষ্ঠ থেকে নবম তলায় থাকা পাঁচটি মন্ত্রণালয়ের দপ্তর পুড়ে যায়। এর মধ্যে অষ্টম ও নবম তলার অধিকাংশ নথি পুড়ে গেছে।

অগ্নিকাণ্ডের কারণ খতিয়ে দেখতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিবের নেতৃত্বে আট সদস্যের কমিটি গঠন করে সরকার। কমিটিকে তিন দিনের মধ্যে প্রাথমিক প্রতিবেদন দিতে বলা হয়, যে সময়সীমা শেষ হয় সোমবার। পরে প্রাথমিক প্রতিবেদন জমা দেওয়ার সময় একদিন বাড়িয়ে নেয় কমিটি।

বিফ্রিংয়ে প্রাথমিক তদন্তে পাওয়া তথ্যগুলো তুলে ধরেন বুয়েটের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক মাকসুদ হেলালী। তিনি বলেন, “প্রথম দিন থেকে আমরা যথেষ্ট সময় নিয়ে আন্তরিকভাবে বিষয়টি দেখার চেষ্টা করেছি। বিভিন্ন সংস্থার সহায়তায় আমরা সুনির্দিষ্ট একটি রিপোর্ট তৈরি করতে পেরেছি। যদিও সুনির্দিষ্ট বলছি, তারপরও এটিকে আরও বেশি সমৃদ্ধ করার জন্য আরও বেশ কিছু টেস্ট দেশে-বিদেশে করাব।

তিনি আরও বলেন, আমরা স্যাম্পল পাঠিয়েছি। সে রিপোর্টগুলো পেলে আমাদের রিপোর্ট আরও নিশ্চিত হবে। প্রাথমিকভাবে আমরা দেখেছি, ভিডিও পাওয়ার আগে এবং পরে মিলিয়ে দেখেছি, ফলাফল একই।

আগুনের সূত্রপাতের সময় রাত ১টা ৩২ থেকে ১টা ৩৯ মিনিটের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “সূত্রপাত একটি নির্দিষ্ট সময়ে নয়, সাত মিনিট ধরে আস্তে আস্তে 'স্পার্কের' মাধ্যমে যে জায়গায় আগুন লেগেছে সেটি গরম হয়েছে, সেখান থেকে ম্যাটেরিয়াল খশে খশে পড়েছে। তারপর সেটা একসময় ইগনিশন টেম্পারেচারে গিয়েছে। তারপর আগুন ধরেছে। আগুন ধরার সঙ্গে সঙ্গে ধোঁয়া হয়েছে এবং আগুনের ফ্লেম তৈরি হয়েছে।”

বুয়েটের এই শিক্ষক বলেন, আগুন ঊর্ধ্বমুখী হয়ে উপরের দিকে উঠে গেছে। ধোঁয়া সচিবালয়ের একটি টানেলের প্রভাবে পশ্চিম দিক দিয়ে পূর্ব দিকে বেরিয়ে গেছে। এতে আপাত দৃষ্টিতে মনে হয়েছে আগুন দুই জায়গায়। বাস্তবে আগুনের উৎস ছিল একটিই। কিন্তু বাতাসের গতি, ভবনের নকশার ভিন্নতার কারণে দুই দিকে প্রবাহিত হয়েছে।

”মোটামুটি ১২-১৪ মিনিটে যে আগুন উৎপাদিত হয়েছে সেটি ছড়িয়ে চূড়ান্ত আগুনে রূপায়িত হয়েছে। ভার্টিকালি উপরে উঠে যাওয়ায় এটি নেভানো অত্যন্ত কঠিন পর্যায়ে চলে গেছে।”

ভবনের প্রকৃতির কারণে আগুন নেভানো কষ্টসাধ্য ছিল বর্ণনা করে তিনি বলেন, ছয়তলার আগুন যখন ছড়িয়ে গেছে সেটি না নিভিয়ে সাততলায় যাওয়ার সুযোগ ছিল না। যার জন্য ফায়ার ব্রিগেডকে ছয়তলা শেষ করে সাততলায় উঠতে হয়েছে। নিরুপায় হয়ে, জীবনের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়ার ভয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়েই তাদের এই কাজ করতে হয়েছে।

এ কারণে বাড়তি কিছু সময় লেগেছে বলে তিনি মনে করেন।

অধ্যাপক হেলালী বলেন, “ফায়ার অ্যানালাইসিস থেকে প্রাথমিক একটি প্রতিবেদন তৈরি করে পরবর্তী পর্যায়ে পুলিশের সিআইডি থেকে পাওয়া ভিডিওর সঙ্গে মিলিয়ে দেখেছি, আমাদের অঙ্ক করা জিনিস আর ভিডিও এভিডেন্স ৯৯ ভাগ মিলে গেছে। আমরা প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হয়েছি আগুন এভাবেই সৃষ্টি হয়েছে। এভাবেই প্রবাহিত হয়েছে।

''আগুন প্রাথমিকভাবে সচিবালয়ের উত্তর দিক থেকে দেখা গেছে, দক্ষিণ দিকে দেখা যায়নি। যেটা বাইরে থেকে সচিবালয় দেখি। বাইরে থেকে যখন দেখা গেছে তখন দেড় থেকে দুই ঘণ্টা পরে। ততক্ষণে আগুন সচিবালয়ের দুইটা পয়েন্টে মনে হয়েছে। একটা ছয়তলা একটা আটতলার কোনায়। বাইরে থেকে মনে হয়েছে, দুই জায়গায় অনেক দূরে। কিন্তু আসলে ভেতরে এটা ইন্টারন্যালি কানেকটেড ছিল। এটা বাইরে থেকে বুঝতে অসুবিধা হয়েছে।”

সম্পর্কিত বিষয়: