কুড়িগ্রামের আলোচিত ফেলানী হত্যার ১৩ বছরেও শেষ হয়নি বিচার কার্যক্রম। বিএসএফের বিশেষ কোর্টে দুই দফায় খালাস দেওয়া হয় অভিযুক্ত অমিয় ঘোষকে। এ রায় প্রত্যাখান করে মানবাধিকার সংগঠনের সহযোগিতায় ভারতের সুপ্রিম কোর্টে রিট করা হলেও এখন পর্যন্ত হয়নি শুনানি। আওয়ামী লীগ সরকারের সময় বিচার না হলেও, নতুন সরকারের কাছে ন্যায়বিচারের আশা ফেলানীর বাবা-মায়ের।
২০১১ সালের ৭ জানুয়ারি কুড়িগ্রামের অনন্তপুর সীমান্তে কিশোরী ফেলানীকে গুলি করে হত্যা করে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ। পরে মরদেহ কাঁটাতাঁরে ঝুলিয়ে রাখে সাড়ে ৪ ঘণ্টা। বিষয়টি বিশ্বব্যাপী সমালোচনার ঝড় তোলে।
ঘটনার দুই বছর পর ২০১৩ সালের ১৩ আগষ্ট ভারতের কোচবিহারে বিএসএফের বিশেষ কোর্টে শুরু হয় এ হত্যাকাণ্ডের বিচার। ফেলানীর বাবা ও মামার সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে ৬ সেপ্টেম্বর অভিযুক্ত অমিয় ঘোষকে খালাস দেওয়া হয়। রায় প্রত্যাখান করে পুনরায় বিচার দাবির পর দ্বিতীয় দফায় তাঁকে দেওয়া হয় খালাস।
পরে ভারতের মানবাধিকার সুরক্ষা মঞ্চ ফেলানীর বাবার পক্ষে দেশটির সুপ্রীম কোর্টে রিট পিটিশন করে। এরপর বারবার শুনানির তারিখ পিছিয়ে সবশেষ ২০১৮ সালের ২৫ জানুয়ারি নতুন দিন ধার্য হলেও, তা আর হয়নি। মেয়ে হত্যার বিচার না পাওয়াকে বিগত সরকারের অবহেলাকে দুষছেন ফেলানীর স্বজনরা।
ফেলানীর বাবা নূর ইসলাম বলেন, ‘শেখ হাসিনার কাছে কত আবদার করছি বিচারের জন্যে। ভারত সরকারের কাছে বিচারের জন্য আবদার করছি। দুইবার নিয়ে গেল বিএসএফ আদালতে। উনারাই ডাইকা নিয়া গেল। আমি ওখানে সত্য কথাই বলছি। তারা খালি শুনছে, আজ পর্যন্ত কোনো একটা কাজ করে দেয় নাই, বিচার করে দেয় নাই।’
ফেলানীর মা জাহানারা বেগম বলেন, ‘আগের সরকার কিন্তু বিচার করতে পারত। কিন্তু করে নাই। নতুন যে সরকার হয়েছে, তাদের কাছে দাবি, বিচারটা যাতে আন্তর্জাতিক আদালতে করে দেয়।’
চাঞ্চল্যকর এ হত্যার বিচার দ্রুত শেষ হওয়া জরুরি বলে মনে করছেন আইনজীবীরা। তারা বলছেন, বিচার হলে বাংলাদেশি নাগরিকদের পাশাপাশি ভারতীয় নাগরিকরাও সুরক্ষিত থাকবে। বাদীপক্ষের আইনজীবী এস. এম. আব্রাহাম লিংকন বলেন, ‘ভারতীয় সুপ্রিম কোর্টে যে আবেদনটা করা হয়েছে, যে রিটটি রয়েছে, সেটি নিষ্পত্তি হলে শুধু যে ন্যায়বিচারই হবে, তা নয়। আমি মনে করি ভবিষ্যতে আমাদের বর্ডার ম্যানেজমেন্টসহ, খুন-খারাবি কমে আসবে।’
বারবার ভারত সরকারের আশ্বাসেও বন্ধ হয়নি সীমান্তে হত্যা। দ্রুত ফেলানী হত্যার বিচারসহ সীমান্ত হত্যা বন্ধের দাবি জানিয়েছেন কুড়িগ্রামবাসী।