২৩ ডিসেম্বর ২০২৪ , ৮ পৌষ ১৪৩১ 

রাজনীতি

রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ ইস্যুতে বিএনপির ‘না’

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

প্রকাশিত: ২১:৫৯, ২৬ অক্টোবর ২০২৪

রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ ইস্যুতে বিএনপির ‘না’

রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন এর পদত্যাগ ইস্যুতে বিপরীত অবস্থানে রয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)।  কারণ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ চাইলেও সাংবিধানিক শূন্যতার কথা বলছে বিএনপি।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা বলছেন, বিএনপি রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ ইস্যুতে বড় বড় কোন ‍দুরভিসন্ধি দেখছে। এজন্যই বার বার তারা এই ইস্যুতে সরাসরি সিদ্ধান্ত জানায়নি। বরং বারবার সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার কথা বলছে।

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট পতন ঘটে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের। তিনি দেশ ছেড়ে ভারতে চলে যান। পরে এক অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি জানিয়েছিলেন, শেখ হাসিনা পদত্যাগ করেছেন। তবে সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, শেখ হাসিনার পদত্যাগপত্র তিনি পাননি।

রাষ্ট্রপতির বক্তব্যকে কেন্দ্র করে গত সোমবার তাঁর বিরুদ্ধে শপথ ভঙ্গের অভিযোগ আনেন আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল। পরদিন মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলনে প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব বলেন, আইন উপদেষ্টার বক্তব্যের সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকার একমত। আইন উপদেষ্টা ও তথ্য উপদেষ্টা দুপুরে প্রধান বিচারপতির সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন। একই দিন বিকেলে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সমাবেশ করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলতি সপ্তাহের মধ্যে রাষ্ট্রপতির পদত্যাগসহ পাঁচ দফা দাবি জানায়।

একই দাবিতে সংগঠনটি দেশের বিভিন্ন স্থানেও সমাবেশ ও বিক্ষোভ করে। দুপুরের পর রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ দাবিতে বঙ্গভবনের সামনে অবস্থান ও বিক্ষোভ কর্মসূচি শুরু করে কয়েকটি সংগঠন। কয়েক শ বিক্ষোভকারীর মধ্যে একাংশ রাত আটটার দিকে নিরাপত্তা ব্যারিকেড ভেঙে ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করলে পুলিশ বাধা দেয়। বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ লাঠিপেটা, কাঁদানে গ্যাসের শেল ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে। এতে অন্তত ২০ জন আহত হন। পরে সেনাসদস্যরা পরিস্থিতি শান্ত করেন। রাত দুইটার দিকে বিক্ষোভকারীরা বঙ্গভবনের সামনের সড়ক ছেড়ে যায়।

আজ শনিবার রাজধানীর তেজগাঁও এলাকায় লিফলেট বিতরণে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীও সাংবিধানিক শুন্যতার কথা বলেছেন।

তিনি বলেন, কোনো সাংবিধানিক শূন্যতা যাতে সৃষ্টি না হয়, এ জন্য অনেক চিন্তা করে আমাদের কাজ করতে হবে। অল্প শূন্যতা হলে সেই শূন্যতা ভরাট করা যায়। কিন্তু বড় শূন্যতা হলে সেটা ভরাট করা মুশকিল হয়। এখানে শেখ হাসিনার পতনে যাঁরা অসন্তুষ্ট হয়েছেন, বাংলাদেশের ভেতরের কিছু মানুষ ও বাইরের লোকজন নানা ষড়যন্ত্র–চক্রান্তে মেতে উঠবে।

রিজভী বলেন, এই সরকারের দায়িত্ব হচ্ছে একটি অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচনের নিশ্চয়তা দেওয়া। সেই নির্বাচনের ব্যবস্থা করা দরকার। তিনি অন্তর্বর্তী সরকারকে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করে এর মধ্যে যতটুকু সংস্কার করা দরকার, তা করতে আহ্বান জানান।

একই ইস্যুতে আলোচনার জন্য শনিবার বিকেলে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ দলটির নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে বসেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটি। বৈঠক শেষে অবশ্য কোন পক্ষই এ বিষয়ে কোন মন্তব্য করেনি।

এর আগেও একই সুরে কথা বলেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির দুই সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ ও নজরুল ইসলাম খান। গত ২৩ অক্টোবর প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করে পরে সাংবাদিকদের সালাহউদ্দিন বলেন, ‘এই মুহূর্তে রাষ্ট্রপতির পদে শূন্যতা রাষ্ট্রীয় সংকট সৃষ্টি করবে, সাংবিধানিক শূন্যতা সৃষ্টি করবে— এটা জাতির কাম্য নয়।’

আর নজরুল ইসলাম খান বলেছেন, দেশে নতুন কোনো সাংবিধানিক বা রাজনৈতিক সংকট সৃষ্টি না হয় সেদিকে সবার খেয়াল রাখতে হবে। যদি কেউ সেটা করতে চায় সেটাকে আমরা সবাই মিলে মোকাবিলা করব।

সম্পর্কিত বিষয়: