সব আলোচিত সংস্কারই বিএনপির ৩১ দফায় রয়েছে বলে জানিয়েছে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
আজ বৃহস্পতিবার বিকালে রাজধানীতে এক সেমিনারে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে বিএনপি ভবিষ্যতে ক্ষমতায় গেলে কী করবে সেটির ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে তিনি এ মন্তব্য করেন।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক বলেন, ‘‘সব আলোচিত সব সংস্কার প্রস্তাবই ৩১ দফায় অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। আামি সংস্কার বলতে সেটিই বুঝি যে সংস্কারের মাধ্যমে সংবিধানের কয়েকটি বাক্যের পরিবর্তন নয় শুধু। বরং মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন হবে। একজন মানুষের রোজগারের ব্যবস্থা হবে এবং তার ও পরিবারের আর্থ সামাজিক ব্যবস্থা নিশ্চিত হবে।
তিনি আরও বলেন, আমি সংস্কার বলতে সেটিই বুঝি যা কর্মসংস্থানের মাধ্যমে প্রতিটি নারী ও পুরুষের বেকারত্বের সমস্যার সমাধান করবে; যে সংস্কার নারীদের সন্মান, স্বাধীনতা, ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করবে; যে সংস্কার সকল মানুষের জীবনের সুরক্ষা নিশ্চিত করবে; যে সংস্কার দেশের সন্তানদের আধুনিক শিক্ষা ও নৈতিক মূল্যবোধ গঠন করবে; যে সংস্কার মানুষকে কাঙ্খিত স্বাস্থ্য সেবা দেবে; যে সংস্কার বাজারে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম স্থিতিশীল রাখবে। আমি সংস্কার বলতে সেটিই বুঝি যা কৃষক-শ্রমিকসহ সকল কর্মজীবী মেহনতি মানুষের ন্যায্য ও প্রাপ্য নিশ্চিত করবে।”
বিএনপিসহ সমমনা দলগুলোর সমন্বয়ে প্রণয়ন করা ৩১ দফা সংস্কার প্রস্তাবে সব মত ও পথের সমন্বয়ে বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক-বৈষম্যহীন-সম্প্রীতিমূলক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা, দ্বি-কক্ষ বিশিষ্ট সংসদ, প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রিসভার নির্বাহী ক্ষমতায় ভারসাম্য, প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ দুই মেয়াদ নির্ধারণ, সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ সংশোধন, সুপ্রিম কোর্টের জন্য আলাদা সচিবালয়, ন্যায়পাল নিয়োগসহ বিভিন্ন খাতে সংস্কারের লক্ষ্যে কমিশন গঠনের অঙ্গীকার ব্যক্ত করা হয়েছে।
আওয়ামী লীগ সরকার পতনের আন্দোলনে থাকা দল ও জোটকে নিয়ে গত বছরের ১৩ জুলাই 'সংবিধান ও রাষ্ট্রব্যবস্থার গণতান্ত্রিক সংস্কার এবং অর্থনৈতিক মুক্তির লক্ষ্যে 'রাষ্ট্র মেরামতে ৩১ দফা' ঘোষণা করে বিএনপি।
এর আগের বছর ২০২২ সালের ১৯ ডিসেম্বর তারেক রহমান 'রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতের রূপরেখা' ঘোষণা করেন।
এই সংস্কার প্রস্তাব সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে পরিবর্তন করার কথা তুলে ধরে তারেক রহমান বলেন, ‘‘তা হবে স্টেকহোল্ডার কনসালটেশন এবং পাবলিক কনসেনসাসের মাধ্যমে। সময়ের সাথে এই ৩১ দফাই একদিন আমাদের দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্য তথা সুখী ও স্বনির্ভর বাংলাদেশ অর্জনের দ্বার উন্মোচন করবে বলে ব্যক্তিগত ভাবে আমি বিশ্বাস করি।”
রাজনীতির উদ্দেশ্য শুধু ক্ষমতায় যাওয়া নয় মন্তব্য করে তিনি বলেন, “বরং রাষ্ট্রীয় উন্নয়ন এবং জনগণের অভিপ্রায় বহিপ্রকাশও এর একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। আমাদের গড়ে তুলতে হবে একটি লিবারেল ডেমোক্রেটিক বাংলাদেশ, আমাদের সবাইকে এক হয়ে এগিয়ে যেতে হবে বহু দূরে।”
দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সভাপতিত্বে শামা ওবায়েদ ও ফারজানা শারমিনের সঞ্চালনায় সেমিনারে জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) মোস্তফা জামাল হায়দার, নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহমান মান্না, জামায়াতে ইসলামীর রফিকুল ইসলাম খান, বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাইফুল হক, এনডিএমের ববি হাজ্জাজ, বাংলাদেশ লেবার পার্টির মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটের ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, গণফোরামের অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, এলডিপির রেদোয়ান আহমেদ, এবি পার্টির আসাদুজ্জামান ফুয়াদ, শিক্ষাবিদ অধ্যাপক মাহবুব উল্লাহ, অধ্যাপক বোরহান উদ্দিন খান ও অ্যাডভোকেটে এলিনা খান বক্তব্য রাখেন।
সেমিনারে বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির (বিজেপি) আন্দালিব রহমান পার্থ, জামায়াতের হামিদুর রহমান আজাদ, জাতীয় দলের সৈয়দ এহসানুল হুদা, বিকল্প ধারা বাংলাদেশের নুরুল আমিন বেপারি, গণসংহতি আন্দোলনের আবুল হাসান রুবেল, জাগপার খন্দকার লুৎফুর রহমান ও রাশেদ প্রধান, এনডিপির আবু তাহের, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের মুফতি মহিউদ্দিন ইকরাম, গণতান্ত্রিক বাম ঐক্যের হারুন চৌধুরী ও আবুল কালাম আজাদ, ন্যাপ ভাসানীর আজহারুল ইসলাম, ইসলামী আন্দোলনের আশরাফ আলী আকন্দ উপস্থিত ছিলেন।
আরও উপস্থিত ছিলেন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, চীন, রাশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, নরওয়ে, পাকিস্তান, ভারত, জাপান, সৌদি আরব, জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ বিভিন্ন দেশের কুটনীতিক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আনোয়ার উল্লাহ চৌধুরী, অধ্যাপক নুরুল আমিন, অধ্যাপক এবিএম ওবায়দুল ইসলাম, অধ্যাপক শামসুল আলম সেলিম।