২৩ ডিসেম্বর ২০২৪ , ৮ পৌষ ১৪৩১ 

রাজনীতি

‘যত দ্রুত সম্ভব’ নির্বাচন চাইল জামায়াত

বাংলা ওয়াচ ডেস্ক

প্রকাশিত: ২২:৫১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪

‘যত দ্রুত সম্ভব’ নির্বাচন চাইল জামায়াত

‘যত দ্রুত সম্ভব সংস্কার শেষ করে’ নির্বাচনের দাবি জানিয়েছে জামায়াতে ইসলামী। যদিও আগে সংস্কার, পরে নির্বাচন’, ‘নির্বাচন নিয়ে তাড়াহুড়ো নয়’, গত তিন মাস ধরে জামায়াতে ইসলামীর নেতারা এমন কথা বলে আসছিলেন।

আজ শুক্রবার সকালে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে দলের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের কর্মী সম্মেলনে জামায়াতের এই অবস্থান তুলে ধরেন নায়েবে আমির মুজিবুর রহমান।

তিনি বলেন, “আমি বর্তমান উপদেষ্টা সরকারকে বলব, আপনারা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সংস্কার কাজ শেষ করে তারপরে নির্বাচনের ব্যবস্থা করেন। এটা যদি না হয়, তাহলে এ নির্বাচন তো নির্বাচন হবে না।”

দলটির পক্ষ থেকে নির্বাচন প্রশ্নে এই বক্তব্য একেবারেই নতুন। এতদিন তারা নির্বাচনের চেয়ে সংস্কারকেই বেশি গুরুত্ব দিয়ে এসেছিল। এমনকি অগাস্টের মাঝামাঝি সময় থেকে বিএনপি নির্বাচন চাইতে থাকলে তার সমালোচনাও করেছেন জামায়াতের আমির শফিকুর রহমান।

এরপর বিএনপি ক্রমাগতভাবে জামায়াতকে আক্রমণ করেছে, এমনকি ১৯৭১ সালে দলটির ভূমিকার কথা তুলে ধরে তাদেরকে স্বাধীনতাবিরোধীও বলা হয়েছে।

আগস্টের চতুর্থ সপ্তাহে ঢাকায় এক রুকন সম্মেলনে জামায়াত আমির বিএনপিকে উদ্দেশ করে বলেন, “এখন জাতি বহুমুখী সংকটে, একদিকে শহীদ পরিবারগুলো আহাজারি করছে, আহতরা হাসপাতালের বেডে কাতরাচ্ছে, পা হারা, হাত হারা, চোখ হারা, কী কষ্টের মধ্যে তারা আছে। আবার ইতিমধ্যে বন্যার ভয়াবহতা শুরু হয়েছে।

“যারা জনগণের জন্য রাজনীতি করে… রাজনীতি তো জনগণের জন্য তাদের তো উচিত এই বিপন্ন মানুষের পাশে দাঁড়ানো। এই সময়টায় ওখানে না দাঁড়িয়ে যদি নির্বাচন, নির্বাচন, নির্বাচন জিকির করলে জাতি তা কবুল করবে?”
বিএনপি চাঁদাবাজি ও দখলবাজি করছে অভিযোগ এনে দলটির সঙ্গে আর জোটে না যাওয়ার ঘোষণা দেন জামায়াতের আমির ।

এর প্রতিক্রিয়ায় ২৮ অক্টোবর জামায়াত আমিরকে আক্রমণ করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, “যারা ভোটে জিততে পারবে না, সরকার চালাতে পারবে না, তারা এসব কথা বলে।”

নির্বাচন প্রশ্নে জামায়াত ও বিএনপির বিপরীতমুখী অবস্থান দেখা যায় গত ৫ অক্টোবর প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর সংলাপেও। সেই সংলাপে বিএনপির পক্ষ থেকে দ্রুত নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণার দাবি জানানো হয়।

তবে সেই সংলাপেও জামায়াত জোর দিয়েছিল ‘সংস্কারে’।

জামায়াত আমির সেদিন সাংবাদিকদেরকে বলেন, “এই সরকার দেশ শাসনের জন্য আসেনি, দেশ শাসনের সুষ্ঠু পথ বিনির্মাণের জন্য তারা এসেছে। তাদের কাজ হচ্ছে, গত তিন নির্বাচনে জাতি যা ‘বঞ্চিত’ হয়েছে একটা গ্রহণযোগ্য, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন উপহার দেওয়ার পরিবেশ তৈরি করা। এজন্য কিছু মৌলিক বিষয়ে তাদের সংস্কার করতেই হবে। কী কী মৌলিক বিষয়ে তারা সংস্কার করবেন আমরা সেই বিষয়ে কথা বলেছি।”

প্রায় দুই মাস পর জামায়াতের নায়েবে আমির মুজিবুর রহমানের বক্তব্যে নির্বাচন প্রশ্নে দলটির অবস্থান পরিবর্তনেরই বিষয়টিই ফুটে উঠে।

তিনি বলেন, “উপদেষ্টা সরকারের একটি মাত্র কাজ নির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা দিয়ে প্রস্থান করা। এটা ইউনিভার্সাল ট্রুথ। এটাই কাজ তাদের, অন্য কোনো কাজ নয়।”

জামায়াত প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের হাতে ৪১ দফা প্রস্তাব দিয়েছে জানিয়ে সংস্কার কেন দরকার, সেই বিষয়েও একটা ব্যাখ্যা দেন জামায়াত নেতা।

তিনি বলেন, “আওয়ামী লীগ সরকার নির্বাচন নিয়ে ‘ডাকাতি’ করেছে। দিনের ভোট রাতে হয়েছে। ২০২৪ সালে ডামি নির্বাচন করেছে, কাউকে না পেয়ে নিজেদের মধ্যেই খেলার আয়োজন করেছিল। চুরি-ডাকাতি করে এরা ‘দানবে’ পরিণত হয়েছে।

“আপনি যে নির্বাচন করবেন, দেশে সে ব্যবস্থাটা যদি থাকে তাহলে তো নির্বাচন করবে। যদি নির্বাচনি ব্যবস্থা না থেকে থাকে তাহলে তো ব্যবস্থাটা চালু করতে হবে। এর জন্য সংস্কার দরকার হচ্ছে।”

মুজিবুর রহমান ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় কেন তারা পাকিস্তানের পক্ষে লড়াই করেছেন, তার একটি ব্যাখ্যাও দেন। তিনি দাবি করেন, বাংলাদেশ স্বাধীন হলে দেশটি ভারতের নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে, এই ভেবে তারা মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষে অবস্থান নেন।

গত ৫ অগাস্ট বাংলাদেশ ‘প্রকৃত স্বাধীনতা’ অর্জন করেছে বলেও দাবি করেন তিনি।

সম্পর্কিত বিষয়: