প্রত্যেকটা রাজনৈতিক দল সম্ভাব্য ফ্যাসিস্ট বলে মন্তব্য করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের মহিলা ও শিশু এবং সমাজকল্যাণ বিষয়ক উপদেষ্টা শারমিন এস মুরশিদ। তিনি বলেছেন, ‘প্রত্যেকটা রাজনৈতিক দল সম্ভাব্য ফ্যাসিস্ট। কারণ রাজনৈতিক দলের মধ্যে গণতন্ত্রের চর্চা নেই।’
আজ মঙ্গলবার (১৭ ডিসেম্বর) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির নসরুল হামিদ মিলনায়তনে রোকেয়া দিবস উপলক্ষে ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে লড়াকু নারীদের ভূমিকা ও নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে নারীর অংশগ্রহণ’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন।
নারী অধিকার সংগঠন ‘কথা বলো নারী’ আয়োজিত এই সভায় শারমীন এস মুরশিদ বলেন, ‘আমরা সংরক্ষিত আসন করব না। আমরা সংরক্ষিত নারী আসন নয়, সব আসনে সরাসরি নির্বাচন চাই। তবে এটা হতে পারে, ১০০টা আসনে শুধু নারীরা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে।’
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে নারীর অংশগ্রহণ সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘জুলাই আন্দোলনে স্বতঃস্ফূর্তভাবে নারীরা অংশগ্রহণ করেছিল। নারীদের অংশগ্রহণ ছাড়া এই আন্দোলন সফল হতো না। তবে আন্দোলন পরবর্তী সময়ে নারীদের অবদান মূল্যায়ন করা হচ্ছে না।’
মহিলা ও শিশু এবং সমাজকল্যাণ বিষয়ক উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ বলেন, ‘দুই মাসের মধ্যে নারী আন্দোলনকারীদের তালিকা হবে। আমরা এই তালিকাটা করলে জানতে পারব, এই অভ্যুত্থানে কার কী ক্ষতি হয়েছে। এই তালিকায় এটাও থাকবে কে কী পড়াশোনা করেছে, কার কী পেশা। দক্ষতা ও মেধাকে মাথায় রেখে আমরা পরিকল্পনা করতে পারব। আমরা ঠিক কী কী ভাবে এই মেয়েগুলোকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারব। তবে ভুল তালিকা যেন না হয়। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে আমরা পুরো পরিবার যুক্ত ছিলাম। আমরা দেখেছি, সবকিছু কীভাবে হারিয়ে যায়। আমাদের মেয়েদের আমরা হারিয়ে যেতে দেব না৷ প্রত্যেকটা বিপ্লবে মেয়েদের বড় অবদান থাকে। কিন্তু পরিবর্তীতে সেটা কেউ সেভাবে বলে না।’
মৎস্য ও প্রাণীসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেন, ‘একাত্তরে নারীরা শুধু ধর্ষিত হয়েছে, তা নয়। তাদের অনেক অবদান ছিল ৷ একাত্তরের পরে নারীদের যে অবস্থা হয়েছিল চব্বিশের আন্দোলনের পরেও যেন নারীদের সেরকম অবস্থা না হয়। সাইবার সিকিউরিটি অ্যাক্ট যখন বাতিল করার কথা এসেছিল, নারীর কথা ভেবেই উপদেষ্টা পরিষদের সবাই বলেছিল এটা সম্পূর্ণভাবে বাতিল করা ঠিক হবে না৷’
ফরিদা আখতার বলেন, বিগত সময়ে সংরক্ষিত নারী আসন নয়, ওটা ছিল সাজানো নারী আসন। পুতুল নারী আসন। আমরা সে রকম চাই না৷ তবে সংরক্ষিত নারী আসন লাগবে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখপাত্র উমামা ফাতিমা বলেন, ‘আমাদের যুদ্ধটা এখনো শেষ হয়নি। একটা অভ্যুত্থানের মেয়েদের প্রায় ৬০ শতাংশ অংশগ্রহণ ছিল। তারপরে কী করে নারীদের এত বাজে অবস্থা হলো। আন্দোলন শুরু হওয়ার পর আমি খেয়াল করি, মিছিলে ৬০ শতাংশ অংশগ্রহণ থাকত মেয়েদের। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত তারা বসে থাকত। আর ছেলেরা দেখা যেত, মিছিলের আগে আসত। মিছিল করে চলে যেত। মিছিলে দেখতাম প্রায় সবই মেয়ে। কিন্তু যখন স্টেজে তাকাতাম। দেখতাম সবই ছেলে।’
উমামা ফাতিমা আরও বলেন, ‘স্টেজের ডিজাইনগুলোও এমনভাবে করা হয়, যে মেয়েরা সেখানে উঠতেও বেগ পেতে হয়। আবার মিছিলে যারা স্লোগান দিত, সেখানেও দেখতাম ছেলে। আন্দোলনের পরে আমরা ভয়েসটা রেইজ করতে পারি নাই বলে এত বড় ফিমেইল বেইজটা নাই হয়ে গেছে। নারী লাগবে কোথায়, শুধু নারী কমিশনে। কেন অন্য কমিশনে নয় কেন? বাংলাদেশের রাজনৈতিক ক্ষেত্রটা এত বেশি মেইল ডমিনেটেড, যে কেউ বলতেও পারে না, মেয়েরা নেই কেন?’
উমামা ফাতিমা আরও বলেন, ‘আমি যখন আমার কমিউনিটিতে যাই, কেউ আমাকে মেয়ে হিসেবে ট্রিট করে না। কিন্তু যখনই আমি রাজনৈতিক ক্ষেত্রে যাই, সেখানে আমাকে নারী হিসেবেই ট্রিট করা হয়। একটা ছেলেকে শেখানো উচিত মেয়েদের সঙ্গে কীভাবে কথা বলতে হয়। বাংলাদেশের ছেলেরা একটা মেয়ের সঙ্গে কী করে কথা বলতে হয়, সেটাও জানে না। অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে মেয়েদের ভয়াবহভাবে সাইবার হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে। রাষ্ট্রকেই এর প্রতিকার করতে হবে।’
উমামা ফাতিমা বলেন, ‘টোকেন হিসেবে মেয়েদের ব্যবহার করা হয়। কোনো স্টেজে মেয়ে নাই, সেখানে নারী কোটায় কোনো একটা মেয়েকে তুলে দেওয়া হয়। পলিটিক্যাল ফিল্ডে এই টোকেনিজম আরও প্রকট। মেয়েরা ডিপ্লোমেসি বোঝে না৷ ল্যাং মেরে কাউকে ফেলে দিতে জানে না। তাই রাজনৈতিক ক্ষেত্রে মেয়েরা পিছিয়ে থাকে।’