২৯ ডিসেম্বর ২০২৪ , ১৪ পৌষ ১৪৩১ 

রাজনীতি

ভোটারের বয়স ১৭ করার প্রস্তাব, জনমনে ‘বির্তক সৃষ্টি হয়েছে’: মির্জা ফখরুল

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

প্রকাশিত: ১৬:৩৮, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪

ভোটারের বয়স ১৭ করার প্রস্তাব, জনমনে ‘বির্তক সৃষ্টি হয়েছে’: মির্জা ফখরুল

ভোটার হওয়ার ন্যুনতম বয়স কমানো নিয়ে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের বক্তব্যে জনমনে ‘বির্তক সৃষ্টি হয়েছে’ বলে মন্তব্য করেছেন নিয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

ভোটারের বয়স নির্ধারণের বিষয়টি নির্বাচন কমিশনের উপরে ছেড়ে দেওয়ার আহ্বান রেখেছেন তিনি।

ফখরুল বলেন, “পত্রিকায় দেখলাম, ড. মুহাম্মদ ইউনূস নতুন একটি প্রস্তাব দিয়েছেন। সেই প্রস্তাব হচ্ছে, ১৭ বছর ভোটার হওয়ার জন্য ন্যুনতম বয়সসীমা। এখন তা হলে কি করতে হবে? নতুন করে আবার ভোটার তালিকা তৈরি করতে হবে।

“আমি মনে করি যে, এই বিষয়টাকে এভাবে না বলে, এই বিষয়ে স্টেক হোল্ডারদের সাথে কথা বলে তারপরে এই বিষয়টা আনতে পারলে ভালো হত, কোনো বির্তকের সৃষ্টি হত না। এখন তো আপনার আরও বেশি করে মানুষ আশাহত হয়ে যাবে যে, এটা করতে গিয়ে আরও সময় যাবে।“

শনিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের আবদুস সালাম হলে জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি-জাগপার আলোচনা সভায় মির্জা ফখরুল কথা বলছিলেন।

ফখরুল বলেন, “কেন জানি না মানুষের মধ্যে একটা ধারণা হচ্ছে, এই সরকার ইচ্ছাকৃতভাবে নির্বাচন প্রক্রিয়াকে বিলম্ব করছে, সেটা সঠিক নয়। বাট এট দ্য সেইম টাইম মানুষের মধ্যে এই আশঙ্কা সৃষ্টি হচ্ছে।”

ফোরাম ফর বাংলাদেশ স্টাডিজ আয়োজিত জাতীয় সংলাপে যোগ দিয়ে, ১৭ বছর বয়সীদের ভোটার করার পক্ষে মত দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা।

তিনি বলেন, “তরুণদের তাড়াতাড়ি ভোটার করার পক্ষে। যে যত তরুণ, পরিবর্তনের প্রতি তার আগ্রহ তত বেশি, এই হল আমার যুক্তি। নিজের ভবিষ্যৎ নিয়ে তার মতামত নেবার জন্য আমি মনে করি ভোটার হবার বয়স ১৭ বছর নির্ধারিত হওয়া উচিত।”

‘বিষয়টা নির্বাচন কমিশনের উপরে ছেড়ে দিন’
মুহাম্মদ ইউনূসকে উদ্দেশ্য করে ফখরুল বলেন, “ইউ আর দ্য চিফ এক্সিকিউটিভ, আপনি প্রথমেই বলে দিচ্ছেন যে, ১৭ বছর হলে ভালো। আপনি যখন বলছেন, তখন দ্যাট বিকামস বাইন্ডিং অন ন দ্যা ইলেকশন কমিশন, যেটা ইলেকশন কমিশন ঠিক করবে। এই বিষয়টা ইলেকশন কমিশনকে ছেড়ে দিন।

“যদি এক বছর কমাতে চান তাহলে সেটা ইলেকশন কমিশন প্রস্তাব করুক যারা নতুন হয়েছে। কিন্তু উনি (প্রধান উপদেষ্টা) যখন প্রথমেই বলে দেন তখন ইট ওয়াজ মাইন্ড ইট, এটা একটা চাপ তৈরি হয় ইলেকশন কমিশনের জন্য।”

‘দ্রুত নির্বাচনের দাবি’
অন্তবর্তীকালীন সরকারের প্রতি দলের পূর্ণ সমর্থনের কথাও পূনর্ব্যক্ত করেছেন বিএনপি মহাসচিব। তিনি বলেন, “আমরা যেটা চাই যে, তারা সফল হোক এবং এজন্য সমস্ত রকম সহযোগিতা করতে আমরা তৈরি আছি।
“সবচেয়ে বেশি অনুরোধ করব, দ্রুত করে নির্বাচনের ব্যবস্থা করুন। তা না হলে সমস্যাগুলোর সংকট বাড়তেই থাকবে এবং আমাদের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব বলেন, বর্ডার সমস্যা বলেন, সাবোটজ করার যে সমস্ত সব ঘটনাগুলো হচ্ছে, এই ঘটনাগুলো কমানো যাবে না।”

‘নতুন দল গঠন প্রসঙ্গে’
আগামী দুই মাসের মধ্যে দেশে একাধিক রাজনৈতিক দল আসবে বলে জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম যে আভাস দিয়েছেন, সেটি কতটুকু যৌক্তিক হবে তা নিয়ে চিন্তাভাবনা করার তাগিদ দিয়েছেন মির্জা ফখরুল।

তিনি বলেন, “আরও ২/৩ দল গঠিত হয় আমাদের কোনো আপত্তি নাই। একশটা হলে বা দুইশটা হলে তাতেও আপত্তি নাই। প্রশ্ন হচ্ছে, জাতির জন্যে কতটুকু কাজে লাগবে সেটাই সবাই চিন্তা করবে।“

মানুষ এখনো ‘স্বস্তিতে নেই’ মন্তব্য করে ফখরুল বলেন, “গতকাল একটা অনুষ্ঠানে ছিলাম, সেখানে অধ্যাপক দেবপ্রিয় ভুট্টাচার্য বক্তব্যে বলেছিলেন, খুব ভালো কথা, সংস্কার তো সবাই চায় কিন্তু স্বস্তি চায়, বাজারে স্বস্তি চায়, রাস্তায় বেরিয়ে খুন হয়ে যাবে না সেটা চায়, গাড়ি এক্সিডেন্ট করে ৬/৭ জন মারা যাবে না সেটা চায়।”

অন্তবর্র্তী সরকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, “আমি আশা করব, সরকার আরও বেশি গর্ভানেন্সের দিকে নজর দেবেন। ব্যাংকের সব টাকা লুট করে নিয়ে চলে গেল তাদের বিরুদ্ধে তো একটা মামলাও শুরু হল না।অন্য মামলা হচ্ছে যেটা আগের মত ওই সেই পুরনো অজ্ঞাতনামা ১০০০/১৫০০ আসামি।“

‘দীর্ঘকাল অনির্বাচিত সরকার থাকা উচিত নয়’

অন্তর্বর্তী সরাকারের সংস্কার কাজে বিএনপির কোনো আপত্তি নেই জানিয়ে ফখরুল তাদেরকে জনগণের প্রত্যাশা আরো ভালোভাবে জানার পরামর্শ দিয়েছেন।

তার কথায় “যে বিষয়টা নিয়ে বাংলাদেশের সমস্যা সবচেয়ে বড় তৈরি হয়েছে যে, আজকে বাংলাদেশে অস্থিরতা, অস্থিতিশীলতা এগুলো সমস্যা, এই সমস্যাগুলো অনেক কমে যাবে যদি একটা নির্বাচিত সরকার থাকে। দীর্ঘকাল অনির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমকায় থাকা উচিত নয়।”

নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের দাম কমাতে সরকার ‘কাজ করছে না’ বলে অভিযোগ করেছেন ফখরুল।

তিনি বলেন, “আমরা তো দেখলাম না, উনাদের কজন উপদেষ্টা আছেন বা যারা দায়িত্বপ্রাপ্ত আছেন তারা বাজারে গিয়ে একটু জিজ্ঞাসা করছেন, মানুষকে বুঝার চেষ্টা করছেন যে, সমস্যাটা কোথায়?”

জাগপার সভাপতি খন্দকার লুৎফর রহমানের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন রিয়াজের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় জাতীয় পার্টির(কাজী জাফর) মোস্তফা জামাল হায়দার, ন্যাশনাল পিপলস পার্টি(এনপিপি) চেয়ারম্যান ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আমান উল্লাহ আমান, এনডিপির চেয়ারম্যান আবু তাহের, সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ নজরুল ইসলাম, ন্যাপ চেয়ারম্যান এমএন শাওন সাদেকীসহ আরো অনেকে রাখেন।