‘বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে’ লন্ডনের উদ্দেশ্যে ঢাকা ছেড়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।
রাত সাড়ে ১১টায় ভিআইপি টারমাক থেকে উড়োজাহাজটি রানওয়ের দিকে এগোতে থাকে; এর কয়েক মিনিটের মধ্যে উড়াল দেয় অ্যাম্বুলেন্সটি।
সর্বশেষ ২০১৭ সালের ১৫ জুলাই বিএনপি চেয়ারপারসন লন্ডন গেলে তারেক রহমানের বাসায় ছিলেন।
বিএনপি চেয়ারপারসনের ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক এজেডএম জাহিদ হোসেন বলেন, ম্যাডামকে নিয়ে বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্স যাত্রা শুরু করেছে। আপনাদের মাধ্যমে দেশবাসীর কাছে ম্যাডামের জন্য দোয়া চাই।”
তিনি আরও বলেন, ঢাকা থেকে প্রথমে দোহায় যাবে অ্যাম্বুলেন্সটি। সেখানে যাত্রাবিরতি শেষে লন্ডনের হিথ্রো আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে ৯টার দিকে পৌঁছানোর কথা রয়েছে।
হিথ্রো বিমানবন্দর থেকে বিএনপি চেয়ারপারসনকে সরাসরি অ্যাম্বুলেন্সে করে নিয়ে লন্ডন ক্লিনিকে নিয়ে যাওয়ার তথ্য দিয়ে তিনি বলেন, এ ক্লিনিকেই ম্যাডামকে ভর্তি করা হবে। হিথ্রো বিমানবন্দরে হাসপাতালের চিকিৎসকরাও উপস্থিত থাকবেন তাকে রিসিভ করতে।
এর আগে রাত পৌনে ১১টার দিকে ৮ নম্বর গেইট দিয়ে শাহজালাল বিমানবন্দরে প্রবেশ করে খালেদা জিয়ার গাড়ি। কিছু আনুষ্ঠানিকতা শেষে তিনি ১১টা ১০ মিনিটে কাতারের আমিরের পাঠনো বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে ওঠেন।
পথে পথে হাজারো নেতাকর্মীদের বিদায়ী শুভেচ্ছার মধ্যে তার গাড়ি বহর বিমানবন্দরের দিকে এগিয়ে যায়।
গুলশানে তার বাসা ‘ফিরোজা’ থেকে বিমানবন্দরের পথটুকু যেতে সময় লাগে দেড় ঘণ্টার বেশি। রাত ৮টা ১৬ মিনিটে গুলশানের বাসা ফিরোজা থেকে রওনা হওয়ার পর গুলশান অ্যাভিনিউ, গুলশান-২, বনানী কামাল আতাতুর্ক অ্যাভিনিউ, কাকলী দিয়ে বিমানবন্দর সড়কে উঠতেই পেরিয়ে যায় এক ঘণ্টার মত।
এসব সড়কে হাজার হাজার নেতাকর্মী তাকে শুভেচ্ছা জানাতে সড়কের দুই পাশে জড়ো হয়েছিলেন। সড়কজুড়ে যানজট তৈরি হওয়ায় তার গাড়ি বহর চলেছে ধীর গতিতে। যে কারণে নির্ধারিত সময় রাত ১০টায় তার ফ্লাইট রওনা হতে পারেনি।
পরে বিমানবন্দরের আনুষ্ঠানিকতা শেষে কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানির পাঠানো বিশেষ উড়োজাহাজে করে তিনি লন্ডনের উদ্দেশ্যে রওনা দেন।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার শারীরিক অসুস্থতার জেনে রাজকীয় বহরের এ বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্স পাঠিয়েছিলেন কাতারের আমির, যা সোমবার রাত সাড়ে ৭টায় শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে পৌঁছায়।
দলের চেয়ারপারসনকে বিদায় জানাতে বিমানবন্দরের ভিআইপি লাউঞ্জে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সালাহউদ্দিন আহমেদ, সেলিমা রহমান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, হাফিজ উদ্দিন আহমেদ ছিলেন। বিএনপি চেয়ারপারসনের গাড়ি ৮ নং গেট দিয়ে সরাসরি ভিআইপি টারমার্কে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সের সামনে পৌঁছে। সেখানে মহাসচিবসহ স্থায়ী কমিটির সদস্যরা অ্যাম্বুলেন্সের সামনে দাঁড়িয়ে দলীয় প্রধানকে বিদায় জানান।
‘বিমানবন্দরে থাকবেন তারেক রহমান’
জাহিদ বলেন, ‘‘সাত বছর পর মাকে স্বাগত জানাতে বিমান বন্দরে মূল টার্মিনালে তারেক রহমান সাহেব, তার সহধর্মিনী জোবাইদা রহমান, তার মেয়ে ব্যারিস্টার জাইমা রহমান, লন্ডন বিএনপির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ কয়েকজন থাকবেন। তারাই ম্যাডামকে বরণ করবেন। হিথ্রোর আনুষ্ঠানিকতা শেষে ম্যাডাম লন্ডন ক্লিনিকের উদ্দেশ্যে রওনা হবেন এরকম সিডিউল আামার কাছে আছে।”
৭৯ বছর বয়সী সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন থেকে লিভার সিরোসিস, কিডনি, হার্ট, ডায়াবেটিস, আর্থ্রাইটিসসহ নানা শারীরিক অসুস্থতায় ভুগছেন। ২০১৮ সালে একটি মামলায় দণ্ডিত হয়ে কারাগারে যাওয়ার পর তাঁর অসুস্থতা বাড়ে। এমন পরিস্থিতিতে দল ও পরিবার এবং মেডিকেল বোর্ডের পক্ষ থেকে সরকারের কাছে তাঁর বিদেশে চিকিৎসার অনুমতি চেয়ে আবেদন করা হয়। কিন্তু সরকার তাতে সাড়া দেয়নি। উল্টো বিএনপি চেয়ারপারসনের রোগ ও চিকিৎসা নিয়ে সরকারের শীর্ষ পদ থেকে বিভিন্ন সময় নানা আপত্তিকর মন্তব্য করা হয়েছে। ফলে অসুস্থ নেত্রীর বিদেশে চিকিৎসার দাবিতে রাজপথে টানা আন্দোলন কররেছে বিএনপির নেতা-কর্মীরা।