১০ জানুয়ারি ২০২৫ , ২৬ পৌষ ১৪৩১ 

রাজনীতি

জামায়াত নিয়ে যা বললেন মেজর হাফিজ

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

প্রকাশিত: ২২:২৬, ৯ জানুয়ারি ২০২৫

জামায়াত নিয়ে যা বললেন মেজর হাফিজ

জামায়াতে ইসলামী মুক্তিযুদ্ধের ভূমিকাকে জাস্টিফাই করার চেষ্টা করছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য হাফিজ উদ্দিন আহমেদ।

তিনি বলেন, “আমরা ভেবেছিলাম এখন একটা সুযোগ এসেছে। এ সুযোগে বোধহয় তারা (জামায়াতে ইসলামী) একাত্তরের ভূমিকার জন্য জনগণের কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা করবে। সেটি না করে তারা একাত্তরে তাদের ভূমিকাকে জাস্টিফাই করার চেষ্টা করছে। এখন দেশপ্রেমিক হিসেবে আভির্ভূত হয়েছে।”

বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দল আয়োজিত ‘৭১ এর মুক্তিযুদ্ধই জাতির হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ অহংকার’ শীর্ষক সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।

হাফিজ উদ্দিন বলেন, “জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে, এদেশে দেশপ্রেমিক হল শুধুমাত্র সামরিক বাহিনী এবং জামায়োতে ইসলামী। এ বক্তব্যে আমরা আহত হয়েছি। সেনাবাহিনী মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছে। মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে গড়ে উঠা একটি বাহিনী জনগণের বাহিনী হয়ে নয় মাস যুদ্ধ করে দেশকে স্বাধীন করেছে। এ বাহিনী গড়ে তুলেছেন মেজর জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বে তৎকালীন ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট এবং ইপিআর’র সৈনিক অফিসাররা।

তিনি আরও বলেন, “বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে কারও সার্টিফিকেটের প্রয়োজন নেই তারা দেশপ্রেমিক কি দেশপ্রেমিক না। তাদের অতীতের ভূমিকা, একাত্তরের ভূমিকা ও বর্তমান ভূমিকা। প্রত্যেকটি ভূমিকা সাক্ষ্য দেয় তারা সবসময় জনগণের পাশে ছিল, ভবিষ্যতেও জনগণের পাশে থাকবে। তবে জামায়াতে ইসলামীর এমন বক্তব্যে আমি অবাক হয়েছিলাম।”

রংপুরের পাগলাপীরে গত ২৫ ডিসেম্বর জামায়াতে ইসলামীর এক সমাবেশে দলের আমির শফিকুর রহমান বলেন, “দেশে পরীক্ষিত দুটি দেশপ্রেমিক শক্তি আছে– একটি সেনাবাহিনী, আরেকটি জামায়াতে ইসলামী। আওয়ামী লীগ সরকার এ দুই শক্তিরই ক্ষতিসাধন করেছে। আগেই সেনাবাহিনীর ক্ষতিসাধন করেছে। পরে জামায়াতকে তছনছ করে দিতে উঠে পড়ে লাগে।”

এরপর থেকে এমন বক্তব্য নিয়ে সমালোচনার মধ্যে বৃহস্পতিবার বিএনপি নেতা হাফিজ বলেন, “আমরা তাদেরকে এতদিন মিত্র হিসেবে গণ্য করে এসেছি। তাদের উপরে যখন অত্যাচার নির্যাতন চালিয়েছে ফ্যাসিস্ট বাহিনী, আমরা তাদেরকে সহমর্মিতা জানিয়েছি। তাদের দলকে যখন বিলুপ্ত করে দেওয়া হয়েছে, ধানের শীষ দিয়ে তাদেরকে নির্বাচন করার সুযোগ দিয়েছি।

“বেগম খালেদা জিয়া তাদেরকে মন্ত্রী সভায় স্থান দিয়েছেন। আমরা অনেকেই সেটি পছন্দ করিনি, কিন্তু দলের শৃঙ্খলার স্বার্থে মেনে নিয়েছি। তার বিনিময়ে কি তাদের আজকে এই উক্তি করা সঠিক হয়েছে? আমরা এই ধরনের উক্তি তাদের কাছে আশা করি না।”

বর্তমানে রাজনৈতিক দলগুলোর গড়ে ওঠা ‘ইস্পাত কঠিন ঐক্য’ এমন বক্তব্যে ‘ফাটল’ সৃষ্টি করতে পারে মন্তব্য করে তিনি বলেন, “এ ব্যপারে তারা ভবিষ্যতে আরও যত্নবান হবেন। ১৯৭১ সালে ছিল সাধারণ মানুষের যুদ্ধ, এই যুদ্ধের ফলে ভৌগলিক পরিবর্তন হয়েছে, পতাকা বদল হয়েছে। একটি জাতি একবারই স্বাধীন হয়, বারংবার স্বাধীন হবে না।

“একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধে যারা এর বিরোধীতা করেছিলেন, তারা হয়ত তাদের কালিমা মুক্ত হওয়ার জন্য, এই মহান স্বাধীনতার যুদ্ধকেই তারা অবমূল্যায়ন করার চেষ্টা করতে পারেন। এটি অত্যন্ত দুঃখজনক।”

বিএনপির এই প্রবীন নেতা বলেন, “আমরা অবাক হই, ১৯৪৭ সালে সারাদেশের মানুষ পাকিস্তান চেয়েছিল। সেই সময়ও জামায়াতে ইসলামী পাকিস্তানের বিরোধীতা করেছিল। এরপর ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধে তাদের বিরোধীতা করেছিল, আমাদের বিরুদ্ধে তারা অস্ত্রধারণ করে যুদ্ধ করেছে এই কথাও সর্বজনবিদিত।

“তারপরও স্বাধীনতা পরবর্তিকালে আওয়ামী দুঃশাসনের কারণে আমরা তাদেরকে আমাদের জোটে আশ্রয় দিয়েছি। আমাদের সাথে থেকে তারা রাজনীতি করুক, তারা অতীতের ভুলের জন্য ক্ষমা চেয়ে আবার নতুনভাবে এই স্বাধীন দেশটিকে গড়ে তোলার জন্য আবার আত্মনিয়োগ করুক। এটাই ছিল প্রত্যেকটা বিএনপি কর্মীর এবং আমাদের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার একান্ত চাওয়া।

“আমরা সকল সময়েই তাদেরকে সহমর্মিতা সমর্থন জুগিয়েছি। আমাদের জোটেও তাদের স্থান দিয়েছি। এখনও তাদেরকে বন্ধু হিসেবেই আমরা বিবচেনা করি। এই মুহূর্তে যখন বিএনপির বিরুদ্ধে বিভিন্ন অ্যাঙ্গেল থেকে ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে এসময় তাদের এ ধরনের বক্তব্য তারা দেশপ্রেমিক, শহীদ জিয়া এবং তার দল বিএনপি দেশদ্রোহী এই ধরনের ইঙ্গিতপূর্ণ বক্তব্য আমরা ঘৃণাভরে প্রত্যাখান করছি।”