হাসিনা উৎখাতে নেতৃত্ব দেওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনসহ আরও কয়েকটি সংগঠন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের পদত্যাগের জন্য সময় বেঁধে দিয়েছে। মঙ্গলবার বঙ্গভবনের সামনে গভীর রাত পর্যন্ত চলেছে বিক্ষোভ। হয়েছে নানা নাটকীয়তা। রাষ্ট্রপতির পদত্যাগের বিষয়ে সময়ও বেধে আন্দোলনকারীরা। সব মিলিয়ে রাষ্ট্রপতিকে অপসারণের দাবি প্রবল রূপ নিয়েছে। প্রশ্ন হল, অন্তর্বর্তী সরকার কি চাইলেই রাষ্ট্রপতির পদ থেকে মো. সাহাবুদ্দিনকে অপসারণ করতে পারে? এ বিষয়ে কী বলছে সংবিধান, কী বলছেন সংবিধান বিশেষজ্ঞ আইনজীবীরা?
সংবিধান বিশেষজ্ঞ আইনজীবীরা বলছেন, সংসদ যেহেতু কার্যকর নেই, বর্তমান সাংবিধানিক কাঠামোতে থেকে রাষ্ট্রপতিকে অপসারণ করা অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষে সম্ভব না। তবে তাকে বিদায় করা অসম্ভবও না। তেমন মনে করলে সরকার রাষ্ট্রপতিকে চলে যেতে বলতে পারে। রাষ্ট্রপতি নিজেও পদত্যাগ করতে পারেন। সরকার তখন নতুন কাউকে রাষ্ট্রপতি করতে পারে। তবে বর্তমান সংবিধানে থেকে সেটা সম্ভব নয়।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগের ১৫ বছরের শাসন অবসানের পর প্রশাসনের শীর্ষ পদে এরই মধ্যে ব্যাপক রদবদল আনা হয়েছে। অনিবার্য কারণে রাষ্ট্রপ্রধানের পদে রয়ে গেছেন মো. সাহাবুদ্দিন। এর মধ্যে রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ নিয়ে একটি সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বিস্ফোরক মন্তব্য করেছেন রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিন।
রাষ্ট্রপতি জানান, শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন কি-না, এ বিষয়টি তার জানা নেই। এই মন্তব্যের পর রাষ্ট্রপতির পদত্যাগের দাবিতে শুরু হয়েছে ব্যাপক বিক্ষোভ। ওই বক্তব্যের মধ্য দিয়ে মো. সাহাবুদ্দিন শপথ ভঙ্গ করেছেন দাবি করে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুলের। তিনি বলেন, সাহাবুদ্দিনকে আর রাষ্ট্রপতি পদে রাখা চলে কি না, তা বিবেচনার সুযোগ সংবিধানে আছে।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশের ইতিহাসে একবারই রাষ্ট্রপতিকে অভিসংশনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। তবে তার আগেই তিনি পদত্যাগ করে ফেলায় সেই পথে আর হাঁটেনি সংসদ। ২০০১ সালের নভেম্বরে বিএনপির নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরীকে ২০০২ সালে অপসারণের উদ্যোগ নেয় তখনকার সরকার। সংসদে সেই প্রস্তুতির মধ্যে ২০০২ সালের ২১ জুন রাষ্ট্রপতির পদ থেকে ইস্তফা দেন তিনি।
বাংলাদেশের সংবিধানের একাধিক অনুচ্ছেদে রাষ্ট্রপতির বিষয়ে বলা হয়েছে। সংবিধানের ৪৮ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের একজন রাষ্ট্রপতি থাকবেন, যিনি আইন অনুযায়ী সংসদ-সদস্য কর্তৃক নির্বাচিত হবেন। ৫০ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, রাষ্ট্রপতি কার্যভার গ্রহণের তারিখ থেকে পাঁচ বছর তার পদে অধিষ্ঠিত থাকবেন। ৫২ অনুচ্ছেদে সংবিধান লংঘন বা গুরুতর অসদাচরণের অভিযোগে রাষ্ট্রপতিকে অভিশংসন করার সুযোগ আছে। কিন্তু সে ক্ষেত্রে নানা প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হবে এবং সংসদের কমপক্ষে দুই তৃতীয়াংশ সদস্যের সমর্থন লাগবে।
৫৩ অনুচ্ছেদে শারীরিক বা মানসিক অসামর্থ্যের কারণে রাষ্ট্রপতিকে পদ থেকে অপসারণের যে কথা বলা আছে, সেখানেও সংসদের দুই তৃতীয়াংশ সমর্থনের শর্ত আছে। শেখ হাসিনা পদত্যাগ করেছেন জানানোর পর ৬ অগাস্ট রাষ্ট্রপতি সংসদ ভেঙে দেন। ফলে সংসদে অভিসংশনের কোনো সুযোগ এখন নেই বলে মন দিয়েছেন আইন বিশেষজ্ঞরা।