আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বিএনপি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা একই সুরে কথা বললেও রাষ্ট্রপতি ইস্যুতে তাদের মধ্যে বিভেদ দেখা দিয়েছে। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন চপ্পুর পদত্যাগ প্রশ্নে এই বিভেদ। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনসহ আরও অনেকে চান রাষ্ট্রপতিকে সরিয়ে দেওয়া হোক। বিএনপি তা চায় না।
বিষয়টি নিয়ে বিএনপির সঙ্গে বৈঠক করেও কোনো সমাধানে পৌঁছাতে পারেনি আওয়ামী লীগ হঠানোর আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া শিক্ষার্থীদের প্লাটফর্ম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটি। তাহলে কি সরকার পতনের আড়াই মাসের মাথায় আওয়ামী লীগ বিরোধীদের মধ্যে ঐক্যে ফাটল ধরলো, উঠছে সেই প্রশ্ন।
বিএনপির শীর্ষ নেতারা বলছেন, রাষ্ট্রপতি পদত্যাগ করলে সাংবিধানিক সঙ্কট সৃষ্টি হতে পারে। সেক্ষেত্রে দেশে চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি ভিন্ন দিকে মোড় নিতে পারে। সেই আশঙ্কা থেকে এই পথে হাঁটতে চান না তারা। বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি প্রশ্নে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন- এটাকে দূরত্ব বা ফাটল বলা যাবে না। তারা রাষ্ট্রপতি পরিবর্তন করতে আমাদের সঙ্গে আলোচনা করেছে। আমরা তাদের বোঝানোর চেষ্টা করেছি যে এভাবে রাষ্ট্রপতি পরিবর্তন হলে সাংবিধানিক ও রাজনৈতিক সংকট তৈরি হওয়ার আশঙ্কা আছে।
এই প্রশ্নে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন মনে করছে, রাষ্ট্রপতির অপসারণ ইস্যুতে বিএনপি যে সংকটের কথা ভাবছে সেটি রাজনৈতিক। যেটি আলাপ আলোচনার মাধ্যমেই সমাধান সম্ভব। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্যসচিব আরিফ সোহেল বলেন, হয়তো বিএনপি ভাবছে এখন রাষ্ট্রপতি অপসারণ হলে আগামী নির্বাচন আয়োজন বিলম্বিত হতে পারে। আমরা তাদের আশ্বস্ত করবো যেন প্রয়োজনের তুলনায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার একদিনও বেশি না থাকে।
গত কয়েকদিনে ধারাবাহিকভাবে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে এই ইস্যুতে আলোচনা করছে ছাত্রদের পৃথক দুটি প্লাটফর্ম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটি। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, রাষ্ট্রপতির এই মুহূর্তে কোনো ক্ষমতা নেই। তাই তাকে অপসারণ বা তিনি পদে থাকলে খুব বেশি সংকটও তৈরি হবারও কথা না।
জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন, ১২ জোটসহ অন্যান্য দল এবং জোট রাষ্ট্রপতি ইস্যুতে ছাত্রদের দাবির সাথে একাত্মতা প্রকাশ করেছে। তবে তাদের কেউ কেউ আগে রাজনৈতিক ঐকমত্যকেই গুরুত্ব দিয়েছে। যদি বিএনপি রাজি না হয় রাষ্ট্রপতিকে কি অপসারণ করা সম্ভব হবে? জবাবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্যসচিব আরিফ সোহেল বলেন, বিএনপি বড় একটি রাজনৈতিক দল, ঐকমত্য ছাড়া এই দাবি হয়তো পরিপূর্ণ হবে না। এজন্য আমরা তাদের সাথে আবার বৈঠক করে আলোচনা করবো।
যদিও রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছে এটি বড় কোনো সংকট নয়। মহিউদ্দিন আহমদ বলছেন, এখন যারা সরকার পরিচালনা করছে তাদের জন্য রাষ্ট্রপতি কোনো বাধা না। কারণ তার তো তেমন কোনো ক্ষমতাও নাই। তাহলে এটি নিয়ে যে সংকটের কথা ভাবা হচ্ছে সেটি গুরুতর নয়। বরং তাকে সারানোর কারণে যদি কোনো সংকট তৈরি হয়, তাতে তৃতীয় পক্ষ সুযোগ খোঁজার চেষ্টা করবে।
সম্প্রতি শেখ হাসিনার পদত্যাগ ইস্যু নিয়ে একটি দৈনিক পত্রিকার সম্পাদকের কাছে সাক্ষাৎকার দেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। সেখানে বলা হয়, শেখ হাসিনা পদত্যাগের কোনো দালিলিক প্রমাণ তার কাছে নেই। মূলত সাক্ষাৎকারে দেওয়া রাষ্ট্রপতির ওই বক্তব্যকে ঘিরে দেশজুড়ে নানা বিতর্ক তৈরি হয়। এরপর রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ দাবিতে গত মঙ্গলবার বঙ্গভবন ঘেরাও করে কয়েকটি সংগঠন। একই দিন রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ দাবিতে আল্টিমেটামও দেয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটি।
পরদিনই তড়িঘড়ি করে বিএনপির একটি প্রতিনিধিদল প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে দেখা করে। সেখান থেকে বেরিয়ে তারা জানান, এই মুহূর্তে কোনো সাংবিধানিক সংকট তৈরি হোক সেটি তারা চান না।
শেখ হাসিনার পদত্যাগ ইস্যুতে রাষ্ট্রপতির বক্তব্য নিয়ে নানা সমালোচনা তৈরি হলে ২১ অক্টোবর রাষ্ট্রপতির প্রেস উইং থেকে একটি বিজ্ঞপ্তি পাঠানো হয়। যেখানে রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিন বলেন, শেখ হাসিনার পদত্যাগ একটি মীমাংসিত বিষয়। এটি নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি না করার আহ্বান জানান তিনি।
তাহলে রাষ্ট্রপতি ইস্যুতে সংকটের সমাধান কী? জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন, ১২ জোটসহ অন্যান্য দল এবং জোট রাষ্ট্রপতি ইস্যুতে ছাত্রদের দাবির সাথে একাত্মতা প্রকাশ করেছে। তবে তাদের কেউ কেউ আগে রাজনৈতিক ঐকমত্যকেই গুরুত্ব দিয়েছে।
বিএনপি রাজি না হয় রাষ্ট্রপতিকে কি অপসারণ করা সম্ভব হবে? জবাবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্যসচিব আরিফ সোহেল বলেন, বিএনপি বড় একটি রাজনৈতিক দল, ঐকমত্য ছাড়া এই দাবি হয়তো পরিপূর্ণ হবে না। এজন্য আমরা তাদের সাথে আবার বৈঠক করে আলোচনা করবো।