আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে পলাতক দলটির শীর্ষস্থানীয় নেতা-কর্মীরা। কোথাও দেখা নেই তাদের। যাদেরকে পাওয়া যাচ্ছে, তাদেরকেই কোনো না কোনো মামলায় গ্রেপ্তার করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তবে বেশির ভাগ শীর্ষ নেতার কোনো খোঁজ নেই। এর মধ্যে গত শনিবার (৯ অক্টোবর) রাতে পুলিশ খবর পায় চট্টগ্রামের হালিশহরে একটি ফ্ল্যাটে আত্মগোপনে আছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তাঁকে ধরতে সাঁড়াশি অভিযান চালায় পুলিশ।
পুলিশের সেই অভিযান ব্যর্থ হয়। হালিশহরের শান্তিবাগ এলাকার একটি ফ্ল্যাটটিতে ওবায়দুল কাদেরকে পাওয়া যায়নি। তবে পাওয়া গেছে ওবায়দুল কাদেরের স্ত্রীর বড় ভাই নুরুল হুদাকে। সেখান থেকে তাকে আটক করে হালিশহর থানা হেফাজতে নেওয়া হয়। বিভিন্ন বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় নুরুল হুদাকে। তবে তার কাছে ওবায়দুল কাদেরের বিষয়ে কোনো তথ্য না থাকায় রোববার বিকেলে পরিবারের জিম্মায় ছেড়ে দেওয়া হয়।
বেশ লম্বা সময় ধরে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের পদে আছেন ওবায়দুল কাদের। পাশাপাশি দীর্ঘদিন ছিলেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রীর দায়িত্বেও। তবে দলে তার ভূমিকায় নানা প্রশ্ন উঠছিল। প্রায় সময় তার বাগাড়ম্বরপূর্ণ বক্তব্য দলীয় নেতা-কর্মীদেরও বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলতো। গত ২৯ জানুয়ারি রাজশাহীর এক সমাবেশে ওবায়দুল কাদের বলেছিলেন- আমরা এই দেশে জন্মেছি, এই দেশে মরবো। আমরা পালাবো না। কোথায় পালাবো! পালাবো না, প্রয়োজনে ফখরুল সাহেবের বাসায় গিয়ে উঠবো। জায়গা দেবেন? না হলে ঠাকুরগাঁওয়ের বাড়ি আছে না! ওই বাড়িতে গিয়ে উঠবো।
গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ওবায়দুল কাদেরের এই বক্তব্য নিয়ে ব্যাপক ট্রল হচ্ছে। সেই থেকে কোথাও পাওয়া যাচ্ছে না বর্ষীয়ান এই রাজনীতিককে। এ ছাড়া, সারা দেশে অসংখ্য মামলা হয়েছে ওবায়দুল কাদেরের বিরুদ্ধে। তাকে হন্যে হয়ে খুঁজছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ওবায়দুল কাদের এভাবে গা ঢাকা দেওয়ায় তাকে ঘায়েল করে কথা বলছে বিরোধীরাও।
১৪ আগস্ট ঠাকুরগাঁওয়ে এক সমাবেশে ওবায়দুল কাদেরকে উদ্দেশ্য করে মির্জা ফখরুল বলেছিলেন- ওবায়দুল কাদের না পালিয়ে আমার ঠাকুরগাঁওয়ের বাড়িতে আসতে চেয়েছিলেন। এখন তিনি কোথায় পালিয়ে আছেন? এখন ঠাকুরগাঁওয়ে আছি, আমি আপনাকে আমন্ত্রণ জানাচ্ছি।
আসলে কোথায় আছেন ওবায়দুল কাদের? তার অবস্থান নিয়ে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের মধ্যে নানা কথা প্রচলিত আছে। কেউ কেউ বলছেন, তিনি ৫ আগস্টেই যশোর সীমান্ত দিয়ে ভারতে চলে গেছেন। কারও কারও মতে তিনি সংযুক্ত আরব আমিরাতে অবস্থান করছেন। আবার কেউ কেউ ধারণা করছেন, তিনি দেশের ভেতরেই আত্মগোপনে আছেন।
ওবায়দুল কাদেরের ঘনিষ্ঠ একাধিক নেতা জানিয়েছেন, ৫ আগস্ট দুপুর পর্যন্ত ওবায়দুল কাদের ধানমন্ডি এলাকায় অবস্থান করছিলেন। এর পর থেকে তাঁর সঙ্গে কারও যোগাযোগ হয়েছে, এমন তথ্য নেই।
আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা দেশে ও বিদেশে থাকা অনেক নেতা-কর্মীর সঙ্গে ফোনে কথা বলছেন, এমন বেশ কিছু অডিও প্রকাশ পেয়েছে। দলের দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি ওবায়দুল কাদের কারও সঙ্গে কথা বলেছেন, এমন তথ্য প্রকাশ্যে আসেনি। ৫ আগস্টের আগেও প্রায় প্রতিদিন দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে তিনি বৈঠক করে ব্যস্ত সময় কাটিয়েছেন। জাতীয় নির্বাচনের আগে বিরোধীদের আন্দোলনের সময় তিনি পাল্টা সভা-সমাবেশে নিয়ে মাঠে থেকে বক্তব্য দিয়েছেন। ‘খেলা হবে’ বলে আলোচনা-সমালোচনায় এসেছেন। কিন্তু তিনি নিজেই চলে গেলেন লোকচক্ষুর আড়ালে, এ নিয়ে চলছে নানা আলোচনা।