পুকুরপাড়–লাগোয়া হাঁটাপথ পেরোলে কাঠের তৈরি ফটক। ভেতরে ঢুকলেই দেখা মেলে সবুজ ফলবাগানের। সেখানে আছে বাঁশ, কাঠ ও শণের তৈরি বিশ্রামাগার। এরপর বাগানের ভেতর দিয়ে চলে যাওয়া যায় কমলাবাগানে। বাগানটির অবস্থান গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার বরমী ইউনিয়নের সাতখামাইর পশ্চিমপাড়া গ্রামে।
বাগানজুড়ে ধরে আছে অনেক কমলা। এই বাগানের নাম তাওয়াক্কালনা ফ্রুট। গত বছরও এ বাগানে প্রচুর কমলা ধরেছিল। দ্বিতীয়বারের মতো বাগানে কমলার বাম্পার ফলন হয়েছে। ২০২১ সালে কমলাবাগানের যাত্রা শুরু হয়। মো. অলিউল্লাহ বাইজিদ, মো. ফারুক আহমেদ, মো. আবদুল মতিন ও মো. আইনুল হক এর উদ্যোক্তা। কৃষির প্রতি অনুরাগ থেকেই ব্যতিক্রমী এ উদ্যোগ নেন তাঁরা। এ বছর তাঁরা ফলবাগানটিতে শুরু করেছেন ‘অ্যাগ্রো ট্যুরিজম’। অর্থাৎ দর্শনার্থীরা নামমাত্র মূল্যে টিকিট কেটে কমলাবাগান ঘুরে দেখতে পারেন। একই সঙ্গে নিজ হাতে গাছ থেকে কমলা সংগ্রহ করে নির্দিষ্ট মূল্য দিয়ে সেখান থেকে কিনতে পারছেন। কমলাবাগানের পাশাপাশি মিশ্র ফলের বাগান ঘুরে দেখার সুযোগও আছে তাঁদের।
সরেজমিন দেখা যায়, ফলবাগানের মূল ফটকের পাশেই টিকিট কাউন্টার। সেখানে দর্শনার্থীরা টিকিট কেটে বাগানে ঢুকছেন। প্রতিটি টিকিটের মূল্য নেওয়া হচ্ছে ৩০ টাকা। প্রবেশফটক পার হলে দৃষ্টিনন্দন আঙরবাগান। এই বাগান পার হওয়ার পর চারপাশেই দেখা মিলবে আম, বরই, ড্রাগন, কাঠলিচুসহ বিভিন্ন ফলের গাছের। বাগানের এক পাশে বিশ্রামাগারে বাঁশ দিয়ে তৈরি বেশ কিছু মাচা ও চেয়ার পাতা। দর্শনার্থীরা সেখানে বসে বিশ্রাম নিচ্ছেন। এরপর নির্দেশনা অনুযায়ী বাগানের ভেতর দিয়ে হাঁটাপথ পার হলে কমলাবাগানটি চোখে পড়ে।
বাগান পরিচর্যার দায়িত্বে থাকা মো. সবুজ মিয়া বলেন, দার্জিলিং জাতের ১৫০টি কমলাগাছ আছে সেখানে। এ ছাড়া মান্দারিন জাতের বেশ কিছু গাছ আছে। সব কটি গাছেই প্রচুর কমলা ধরেছে। তবে আপাতত বাগান থেকে কেবল দার্জিলিং জাতের কমলা বিক্রি হচ্ছে। ফেব্রুয়ারি-মার্চ মাসে মান্দারিন জাতের কমলাগুলো বিক্রি শুরু হবে। বর্তমানে ৩০০ টাকা দরে প্রতি কেজি দার্জিলিং জাতের কমলা বিক্রি করা হচ্ছে বাগান থেকে।
বাগান থেকে নিজে কমলা তুলে বাড়ি নিয়ে যাচ্ছেন রাজীব আহমেদ নামের এক ক্রেতা। তিনি বলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে জেনে প্রথমবার বাগানে এসেছেন তিনি। বলেন, ‘তরতাজা কমলা। বাজার থেকে কিনলে অনেক সময় এর মান নিয়ে প্রশ্ন থাকে। তবে নিজ হাতে গাছ থেকে পেড়ে তা কিনে নিলে আস্থা পাওয়া যায়। এগুলোর আকার বাজারের যেকোনো কমলার চেয়ে বড়।’
উদ্যোক্তাদের একজন মো. অলিউল্লাহ বাইজিদ বলেন, অ্যাগ্রো ট্যুরিজম বা কৃষি পর্যটনের ধারণা বাস্তবায়ন করার ফলে দর্শনার্থীদের আগ্রহ আরও বেড়েছে। তাঁরা ফল কেনার পাশাপাশি নিজেরা ফলগাছ রোপণে উৎসাহী হচ্ছেন। বাড়ির আঙিনায় বাগান তৈরির ধারণা নিয়ে যাচ্ছেন। এ ছাড়া নিজ হাতে টাটকা ফল নেওয়ার ক্ষেত্রে মানের ব্যাপারেও নিশ্চিত হতে পারছেন।
তথ্য সূত্র: প্রথম আলো