ইউরোপের উন্নত দেশ জার্মানিতে বছরে ২ লাখ ৮৮ হাজার নতুন অভিবাসী কর্মীর চাহিদা রয়েছে। বার্টেলসম্যান ফাউন্ডেশনের গবেষণা প্রতিবেদনের এ তথ্য রয়েছে।
প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, যথাযথ অভিবাসন নিশ্চিত করা না গেলে ২০৪০ সালের মধ্যে জার্মানির কর্মক্ষম জনসংখ্যা প্রায় ১০ শতাংশ হ্রাস পাবে।
গবেষণায় বলা হয়েছে, বছরে প্রায় ২ লাখ ৮৮ হাজার দক্ষ বিদেশি কর্মী না এলে জার্মানির কর্মক্ষম জনসংখ্যা ৪৬ দশমিক ৪ মিলিয়ন থেকে ২০৪০ সাল নাগাদ ৪১ দশমিক ৯ মিলিয়নে নেমে আসবে। ২০৬০ সালে এই সংখ্যা আরো কমে ৩৫ দশমিক ১ মিলিয়নে দাঁড়াতে পারে।
বার্টেলসম্যানের অভিবাসন বিশেষজ্ঞ সুজানে শুলজ বলেন, "বেবি বুমার প্রজন্মের শ্রমবাজার থেকে বিদায় নেওয়া বড় চ্যালেঞ্জ তৈরি করছে।"
তিনি আরো বলেন, "জার্মানির অভ্যন্তরীণ দক্ষতার উন্নয়ন এবং সম্প্রসারণের প্রয়োজন রয়েছে, তবে এই জনমিতি পরিবর্তন মোকাবিলায় অভিবাসন অপরিহার্য।"
আইন সংস্কারের প্রভাব
২০২৩ সালে জার্মানিতে কর্মসংস্থান আইন সংস্কার করে বিদেশি দক্ষ কর্মীদের জন্য নিয়ম শিথিল করা হয়েছে। জার্মানির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ন্যান্সি ফ্যাজার ২০২৩ সালে এই আইন সংস্কারের সময় একে ‘বিশ্বের সবচেয়ে আধুনিক অভিবাসন আইন' বলে অভিহিত করেছিলেন।
তবে বার্টেলসম্যান ফাউন্ডেশনের গবেষণা বলছে, "স্থানীয় প্রশাসন এবং ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে আরো স্বাগতপূর্ণ সংস্কৃতি তৈরি না হলে" এবং "দীর্ঘমেয়াদি থাকার দৃষ্টিভঙ্গি প্রদান না করলে" বিদেশি কর্মীরা সহজে আসবে না।
অভিবাসন বিশেষজ্ঞ সুজানে শুলজ বলেন, "আইন সংস্কার একটি ভালো পদক্ষেপ, তবে এটি যথেষ্ট নয়। অভিবাসীদের জন্য প্রশাসনিক প্রতিবন্ধকতাগুলো দূর করা, কাজের পরিবেশ উন্নত করা, এবং অভ্যন্তরীণ সংস্কৃতিতে পরিবর্তন আনা জরুরি।”
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বর্তমান অভিবাসনের গতি বাড়াতে অভিবাসন প্রক্রিয়াকে দ্রুত ও স্বচ্ছ করতে হবে। চাকরির বাজারে প্রবেশ সহজ করতে এবং বিদেশিদের যোগ্যতা সঠিকভাবে মূল্যায়নের পদক্ষেপ নিতে হবে। অভিবাসীদের সামাজিক গ্রহণযোগ্যতা বাড়াতে স্থানীয় প্রশাসন ও প্রতিষ্ঠানগুলোর ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ।
সমাজে বৈষম্যের চ্যালেঞ্জ
জার্মানিতে কাজ করতে আসা অভিবাসীদের অনেকেই সামাজিক বৈষম্য এবং প্রত্যাখ্যানের শিকার হচ্ছেন।
২০১৬ সালে জার্মানিতে আসা এক সিরীয় শরণার্থী বিষয়টি নিয়ে উদ্বিগ্ন৷ সিরিয়ার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর ডিগ্রিপ্রাপ্ত ওই ব্যক্তি এখন আইটি বিশেষজ্ঞ হিসেবে কাজ করছেন৷ তিনি বলেন, "সমান অধিকার চাই, কিন্তু সেটা ভিক্ষা করে নয়।”
বৈষম্য অনেক কর্মীর জার্মানি থেকে অন্য দেশে চলে যাওয়ার একটি বড় কারণ বলে মনে করেন সুজানে শুলজ৷ তার মতে, "এমন পরিস্থিতি জার্মানির মতো দেশের জন্য সহ্য করার মতো নয়। বিদেশি কর্মীদের আকর্ষণ করার জন্য জার্মানিকে আরও বন্ধুত্বপূর্ণ হতে হবে।”
সূত্র: ডয়েচে ভেলে বাংলা