কবে হবে নির্বাচন? এই প্রশ্ন উঠতেই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সংশ্লিষ্টরা স্পষ্ট করে কিছু বলছেন না। সবার একি উত্তর, প্রয়োজনীয় সংস্কার কাজ শেষ করে দ্রুত নির্বাচন দেওয়া হবে। এক্ষেত্রে কোনো টাইমফ্রেমের কথা বলা হচ্ছে না। নির্বাচন ইস্যুতে রাজনৈতিক দলগুলোও আগের মতো প্রশ্ন তুলছে না। তবে ২০২৫ সালের মধ্যেই ভোট চায় দেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপি।
বিএনপির দায়িত্বশীল নেতারা বলছেন, তাদের সব সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড এখন জাতীয় নির্বাচন ঘিরে। তাদের আশঙ্কা, এক-এগারোর সরকারের মতো দুই নেত্রীকে মাইনাস করার কোনো কৌশল এ সরকারেরও থাকতে পারে। এছাড়া দলের প্রতি মানুষের জনসমর্থন ধরে রাখাটাও চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। যত সময় যাবে তত সমর্থন কমতে পারে বিএনপির। সব মিলিয়ে আগামী বছরই ভোট চায় বিএনপি।
এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান একটি সংবাদমাধ্যমকে বলেন- আমরা সবাই প্রত্যাশায় আছি নতুন বছর ২০২৫ সালের দিকে। নতুন বছর বাংলাদেশের মানুষের জন্য নতুন বার্তা নিয়ে আসবে। ১৮ কোটি মানুষের প্রত্যাশা বিবেচনায় এনে ২০২৫ সালের মধ্যে গণতন্ত্র পূর্ণ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বর্তমান সরকার নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে গণ অধিকার ফিরিয়ে দেবেন- এমনটাই প্রত্যাশা করি।
জানা গেছে, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগ পর্যন্ত নেতা-কর্মীকে নিরবচ্ছিন্নভাবে মাঠে রাখার কৌশল নিয়েছে বিএনপি। নানা কর্মসূচির মাধ্যমে নেতা-কর্মীকে ব্যস্ত রাখার পাশাপাশি নির্বাচনি রোডম্যাপ ঘোষণার দাবিতে সরব থাকবে দলটি। কর্মসূচির মাধ্যমে সাধারণ মানুষের আরও কাছাকাছি যাওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হবে। এ জন্য জনইস্যুকেই বেশি প্রাধান্য দেওয়া হবে। পাশাপাশি দলের আদর্শ, নীতি ও রাষ্ট্র সংস্কারে দেওয়া প্রতিশ্রুতি প্রচারের উদ্যোগও নেওয়া হচ্ছে। এভাবে আগামী নির্বাচন পর্যন্ত মাঠ দখলে রাখতে চায় দলটি।
বর্তমান সরকার ছয়টি খাতে সংস্কারের ঘোষণা দিয়েছে, যাতে স্বৈরশাসনের পুনরাবৃত্তি রোধ করা যায় এবং সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত হয়। গণমাধ্যমসহ আরও কয়েকটি খাতে সংস্কারের জন্য কয়েক দিন আগে আরও ছয়টি কমিশন গঠন করা হয়েছে। তবে সব সংস্কার অন্তর্বর্তী সরকার করে দিয়ে যাবে, সেটা চায় না বিএনপি। দলটি সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে প্রয়োজনীয় সংস্কারের পক্ষে। এজন্য যৌক্তিক সময় দিতে রাজি।
এ ছাড়া পাশাপাশি বিএনপি ও যুগপৎ আন্দোলনের শরিক দলগুলো সরকারের কাছে নির্বাচনি রোডম্যাপ দাবি করেছে। এরই মধ্যে বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরামের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে, ডিসেম্বরের মধ্যে রোডম্যাপের ঘোষণা না এলে আগামী মার্চ-এপ্রিল থেকে আন্দোলন কর্মসূচিতে যাবে দলটি।
বিএনপি নেতৃত্ব মনে করে, এক-এগারোর সময় ক্ষমতাসীনরা দুই নেত্রীকে মাইনাস করতে কিংস পার্টি গঠন করেছিল। যদিও শেষ পর্যন্ত সেটি সফল হয়নি। এবারেও সে রকম কোনো বিষয় থাকতে পারে বলে এরই মধ্যে রাজনৈতিক মহলে শঙ্কা তৈরি হয়েছে। সে ক্ষেত্রে বিএনপি চাইছে সম্ভাব্য কিংস পার্টি গঠনের আগেই নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করা হোক। রোডম্যাপ ঘোষণা হলে সব দল নির্বাচনি কার্যক্রমে ব্যস্ত হয়ে যাবে। ফলে এক-এগারোর ভয় অনেকটাই কেটে যাবে।
দায়িত্বশীলরা বলছেন, দেশের পরিস্থিতি অনুকূলে থাকতে থাকতে দ্রুত নির্বাচন চায় বিএনপি। বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম বলেন- সরকারের কিছু কিছু উপদেষ্টার বক্তব্যে নির্বাচন নিয়ে জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছে। ভোট তাড়াতাড়ি হবে? নাকি আরও দেরি হবে। আমরাও বলছি, যদি নির্বাচন দীর্ঘায়িত হয় তাহলে পতিত স্বৈরাচার আবার ফিরে আসার সুযোগ সৃষ্টি হবে। আমাদের দাবি দ্রুত নির্বাচনের রোডম্যাপ দিতে হবে।