গুঞ্জন রয়েছে, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান নতুন বছরের ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে তারেক রহমান দেশে ফিরতে পারেন। বিএনপির সূত্রগুলো বলেছে, প্রস্তুতির অংশ হিসেবে নিরাপত্তা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। এমনকি তারেক রহমানের জন্য বাড়িও খোঁজা হচ্ছে। এরই মধ্যে যুক্তরাজ্য থেকে একটি প্রতিনিধিদল নিরাপত্তার বিষয়টি খতিয়ে দেখতে বাংলাদেশ ঘুরে গেছে।
এদিকে গতকাল শুক্রবার সকালে যুক্তরাজ্যে গেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ। যুক্তরাজ্যে তিনি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সঙ্গে দেখা করবেন। এই সফর থেকে তিনি ফিরলে তারেক রহমানের দেশে ফেরার বিষয়ে নতুন বার্তা আসতে পারে বলেও ধারণা করা হচ্ছে।
জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন গতকাল শুক্রবার বলেন, যত দ্রুত সম্ভব মামলা-মোকদ্দমা থেকে মুক্ত করে তাঁকে (তারেক রহমান) বাংলাদেশে আনার ব্যাপারে চেষ্টা চলছে। কোনো দিনক্ষণ নয়, বিষয়টি নির্ভর করছে আইনজীবীদের ওপর, আদালতের ওপর।
গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ ক্ষমতাচ্যুত হয়; এরপর নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত হয় অন্তর্বর্তী সরকার। পটপরিবর্তনের পরপরই তারেকের দেশে ফেরার আলোচনা জোরালো হয়। বিশেষ করে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় বেকসুর খালাস পাওয়ার পর তাঁর ফেরার সম্ভাবনা আরও উজ্জ্বল হয়েছে বলে মনে করছেন দলের নেতা-কর্মীরা।
দলীয় সূত্র বলেছে, তারেক রহমান ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে দেশে ফিরতে পারেন বলে দলের মধ্যে গুঞ্জন রয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে চলমান মামলাগুলো আইনি মোকাবিলার পাশাপাশি নিরাপত্তা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণসহ সার্বিক প্রস্তুতি জোরেশোরে চলছে। এমনকি তাঁর জন্য বাড়িও খোঁজা হচ্ছে।
দলীয় ও তারেক রহমানের ঘনিষ্ঠ একাধিক সূত্র বলেছে, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দেশে ফেরাকে সামনে রেখে চলতি মাসের শুরুতে যুক্তরাজ্য থেকে চার সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল বাংলাদেশে আসে। বিজয় দিবসের আগেই দলটি যুক্তরাজ্যে ফিরে যায়। বাংলাদেশে অবস্থানকালে তারেক রহমানের নিরাপত্তার বিষয়টি খতিয়ে দেখে তারা। এ সময় দলটি তারেক রহমানের মামলার বিষয়ে আইনজীবীদের সঙ্গেও কথা বলেছে। প্রতিনিধিদলটি তারেক রহমানের জন্য বাসাও খোঁজ করেছে।
তারেক রহমানের ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র বলেছে, দেশে ফিরে প্রথমে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বাসভবন ফিরোজায় ওঠার কথা রয়েছে তারেক রহমানের। কিন্তু সেখানে থেকে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করা সম্ভব হবে না বলে তাঁর জন্য পৃথক বাসার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। যুক্তরাজ্য থেকে আসা প্রতিনিধিদলটি দেশে অবস্থানকালে ফিরোজার আশপাশে বেশ কয়েকটি বাসা দেখেছে। যদিও এসব বিষয়ে প্রকাশ্যে কথা বলতে রাজি হননি কেউ।
যুক্তরাজ্যে ১২ দিনের সফর শেষে ১২ ডিসেম্বর দেশে ফেরেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তারেক রহমানের দেশে ফেরা নিয়ে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, তাঁর (তারেক রহমান) বিরুদ্ধে অনেক মিথ্যা, প্রতিহিংসামূলক মামলা রয়েছে। সেগুলো প্রত্যাহার হলে বা আদালতের মাধ্যমে শেষ হলে তিনি ফিরবেন।
বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা বলছেন, তারেক রহমানের বিরুদ্ধে করা অধিকাংশ মামলাই মিথ্যা ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী মামলাগুলো মোকাবিলা করা হচ্ছে। তাঁর বিরুদ্ধে করা অধিকাংশ মানহানির মামলা খারিজ হয়েছে। এখনো ২৪টি মানহানির মামলা রয়েছে। এগুলো শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে। এ ছাড়া চারটি মামলায় তিনি দণ্ডপ্রাপ্ত। সেগুলোরও শিগগিরই শুনানি হবে।
জানতে চাইলে বিএনপির কেন্দ্রীয় আইনবিষয়ক সম্পাদক ও তারেক রহমানের আইনজীবী ব্যারিস্টার কায়সার কামাল গতকাল বলেন, দেশে ফেরার বিষয়ে যথাসময়েই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবেন তারেক রহমান। তিনি (তারেক রহমান) চান, তাঁর বিরুদ্ধে হওয়া প্রতিটি মামলাই যেন আইনি প্রক্রিয়ায় সমাধান করা হয়।
ওয়ান-ইলেভেন সরকারের সময় ২০০৭ সালের ৭ মার্চ তারেক রহমানকে গ্রেপ্তার করা হয়। ২০০৮ সালের ৩ সেপ্টেম্বর জামিনে মুক্তি পেয়ে ১১ সেপ্টেম্বর চিকিৎসার জন্য সপরিবার যুক্তরাজ্যে যান তিনি। তখন থেকেই তিনি লন্ডনে রয়েছেন। লন্ডনে থাকাকালে ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি তাঁর মা বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া কারাগারে যাওয়ার পর দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নেন তারেক রহমান। সেখানে থেকেই তিনি দল পরিচালনা করছেন।