দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ২৭ রানে হারিয়ে এক ম্যাচ বাকি রেখেই সিরিজের ফয়সালা করে দিল বাংলাদেশ। ওয়ানডেতে হোয়াইটওয়াশড হওয়ার পর দল ছিল কোণঠাসা। সেখান থেকে এই সিরিজ জয়, বিস্ফোরক ব্যাটসম্যানে ঠাসা দুইবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের বিপক্ষে দুই ম্যাচেই সিরিজ জয় সত্যিকার অর্থেই দারুণ কিছু।
প্রথম ম্যাচে ১৪৭ রান নিয়ে রোমাঞ্চকর লড়াইয়ে ৭ রানে জিতেছিল বাংলাদেশ। দ্বিতীয় ম্যাচে সেন্ট ভিনসেন্টে বাংলাদেশ সময় বুধবার সকালে বাংলাদেশ করতে পারে ২০ ওভারে ১২৯ রান। এবার আর আগের দিনের মতো ম্যাচ জমে উঠতে দেয়নি বোলাররা। ক্যারিবিয়ানদের ইনিংস শেষ হয় ১০২ রানেই।
আগের ম্যাচে শেষ সময়ে দারুণ এক ক্যামিও খেলা শামীম হোসেন ব্যাট হাতে জ্বলে ওঠেন এই ম্যাচেও। একশর নিচে আটকে পড়ার শঙ্কায় থাকা দলকে এগিয়ে নেয় দুটি করে চার ও ছক্কায় তার ১৭ বলে ৩৫ রানের মহামূল্য ইনিংস।
বোলিংয়ে বাংলাদেশের দাপটের শুরু ও শেষটা করেন অভিজ্ঞ তাসকিন। দারুণ বোলিংয়ে সঙ্গ দেন অন্যরাও। তবে বোলারদের ম্যাচেও গুরুত্বপূর্ণ ইনিংস খেলে ম্যাচের সেরা শামীম।
আগের ম্যাচের মতোই টস হেরে ব্যাটিংয়ে নামে বাংলাদেশ। টস জিতে ক্যারিবিয়ান অধিনায়ক রভম্যান পাওয়েল বলেছিলেন, উইকেট আগের ম্যাচের চেয়েও ভালো মনে হচ্ছে তার কাছে। আদতে প্রথম ওভার থেকে দেখা যায় উইকেটে টার্ন ও গ্রিপ। টস হেরেও আগে ব্যাটিং পেয়ে দারুণ খুশির কথা বলেছিলেন লিটন। সময়ের সঙ্গে তার সেই হাসি চওড়া হয় আরও।
বাংলাদেশ এ দিন উদ্বোধনী জুটিতে পরিবর্তন আনে। সৌম্য সরকারের সঙ্গে ইনিংস শুরু করেন লিটন, তিনে তানজিদ হাসান। তবে পারফরম্যান্সে পরিবর্তন আসেনি।
দুঃসময়ের জাল ছিঁড়তে পারেননি লিটন। আকিল হোসেনের স্পিনে বারবার অস্বস্তিতে পড়ে বাংলাদেশ অধিনায়ক স্টাম্পড হন ১০ বলে ৩ রান করে। পরের ওভারে রোস্টন চেইসের টার্নে বোল্ড তানজিদ (২)।
আফিফ হোসেনের জায়গায় একাদশে ফিরে মেহেদী হাসান মিরাজ চারে নেমে চেষ্টা করেন অস্বস্তির মেঘ সরানোর। আকিলকে স্লগ সুইপে ছক্কার পর চার মারেন তিনি কাট করে। পরের ওভারে বাউন্ডারিতে পাঠান তিনি চেইসকে। পাওয়ার প্লেতে তার পরও রান আসে ২৯।
ওপেনিং থেকে হাত খোলার সুযোগ না পাওয়া সৌম্য ৯ (১৮ বলে ১১) রান আউট হয়ে যান নবম ওভারে। মিরাজ শট খেলার চেষ্টায় বার দুয়েক অল্পের জন্য রক্ষা পেয়ে শেষ পর্যন্ত আউট হন ২৫ বলে ২৬ করে।
১০ ওভারে বাংলাদেশের রান ছিল ৪ উইকেটে ৪৫।
স্পিন বোলিংয়ের সামনে ঝড় তোলার জন্য ব্যাটিং অর্ডারে প্রমোশন পাওয়ার রিশাদ হোসেন থেমে যান একটি চার মেরেই। শেখ মেহেদি হাসানের ইনিংস শেষ হয় ১১ রানে।
আগের ম্যাচের মতো ছোট্ট কিন্তু কার্যকর ইনিংস উপহার দেন জাকের আলি। একটি করে চার ও ছক্কা মারার পর আরেকটি ছক্কার চেষ্টায় বিদায় নেন তিনি ২০ বলে ২১ রান করে।
৮৮ রানে ৭ উইকেট হারানো বাংলাদেশের তখন ১০০ ছোঁয়া নিয়েই শঙ্কা। শামীম হয়তো বললেন, ‘আমি আছি না…!’
আগের দিন যেখানে শেষ করেছিলেন, সেখান থেকেই যেন শুরু করলেন তিনি। ক্রিজে যাওয়ার পরপরই শাফল করে প্রিয় শটে ছক্কা মারলেন ওবেড ম্যাককয়কে। বাঁহাতি এই পেসারকেই পরের ওভারে ছক্কায় ওড়ালেন পুল শটে। রোমারিও শেফার্ডের বলে তার টানা দুটি চারসহ শেষ ওভার থেকে এলো ১৫ রান।
তানজিম হাসানের সঙ্গে অবিচ্ছিন্ন জুটি ২৩ বলে ৪১ রানের। সেখানে শামীমের অবদান ১২ বলে ৩০। বাংলাদেশ পৌঁছে যায় ১৩০ রানের কাছে।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের রান তাড়ার শুরুটা ছিল আশা জাগানিয়া। প্রথম দুই ওভারে তারা তোলে ১৯ রান। তবে পরের ওভারেই জোড়া উইকেটে তাদেরকে নাড়িয়ে দেন তাসকিন আহমেদ। তার দুর্দান্ত প্রথম ডেলিভারির জবাব পাননি ব্র্যান্ডন কিং। টানা দ্বিতীয় ম্যাচে শূন্যতে বিদায় নেন আন্দ্রে ফ্লেচার।
প্রথম ওভারে জনসন চার্লসের ব্যাটে ছক্কা ও চার হজম করা শেখ মেহেদি শোধ তোলেন তাকে ১৪ রানেই থামিয়ে। পাওয়ার প্লের শেষ ওভারে এই অফ স্পিনার বিদায় করেন বিপজ্জনক নিকোলাস পুরানকেও। স্লিপে ফিল্ডার রাখার জন্য কৃতিত্ব দিতে হবে অধিনায়ক লিটনকেও।
রভম্যান পাওয়েল আউট হতে পারতেন পরের ওভারেই। কিন্তু তানজিম হাসানের বলে স্লিপে সহজ ক্যাচ ছাড়েন সৌম্য সরকার। বল ছোবল দেয় তার আঙুলে। ফিজিওর সঙ্গে মাঠ ছাড়েন তিনি ব্যাথায় কাতরাতে কাতরাতে।
তবে এটির খেসারত দিতে হয়নি দলকে। পরের ওভারেই হাসান মাহমুদ বিদায় করেন পাওয়েলকে। পয়েন্টে সামনে ঝাঁপিয়ে চমৎকার ক্যাচ নেন মিরাজ। আগের ম্যাচে বিধ্বংসী ইনিংস খেলা ক্যারিবিয়ান অধিনায়ক এবার শূন্যতে জীবন পেয়ে ফেরেন ৬ রানে।
পরের ওভারে তানজিমের শর্ট বলে যখন আউট হলেন শেফার্ড, ওয়েস্ট ইন্ডিজ তখন ধুঁকছে ৪২ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে।
দলের পঞ্চাশ হতেই লেগে যায় দ্বাদশ ওভার। রোস্টন চেইস ও আকিল হোসেন চেষ্টা করেন দলকে লড়াইয়ে রাখতে। বড় শট খেলার সুযোগ অবশ্য তারা পাচ্ছিলেন না।
পাঁচ ওভারে যখন প্রয়োজন ৬৪ রান, গা ঝাড়া দেন তখন দুজন। হাসান মাহমুদের টানা দুই বলে ছক্কা মারেন চেইস, রিশাদকে মাথার ওপর দিয়ে উড়িয়ে দিন আকিল।
তবে ওই ওভারেই টানা দুই বলে চেইস (৩৪ বলে ৩২) ও গুডাকেশ মোটিকে ফিরিয়ে উত্তেজনা শেষ করে দেন রিশাদ। আকিলের ৩১ রানে কোনোরকমে একশ পার হতে পারে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। তাকে ফিরিয়েই ম্যাচ শেষ করে দেন তাসকিন।
বাংলাদেশের বিপক্ষে ওয়েস্ট ইন্ডিজের সর্বনিম্ন সংগ্রহ এটিই। ২০১৮ সালেও দেশের বাইরে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে সিরিজ হারিয়েছিল বাংলাদেশ। তবে সেবার শেষ দুটি ম্যাচ হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডায়। ক্যারিবিয়ানের টি-টোয়েন্টি সিরিজ জয় তাই এটিই প্রথম।
সিরিজ শেষ ম্যাচ শুক্রবার বাংলাদেশ সময় সকাল ৬টায়।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
বাংলাদেশ: ২০ ওভারে ১২৯/৭ (লিটন ৩, সৌম্য ১১, তানজিদ ২, মিরাজ ২৬, জাকের ২১, রিশাদ ৫, মেহেদি ১১, শামীম ৩৫*, তানজিম ৯*; আকিল ৪-০-১৬-১, শেফার্ড ৩-০-২৬-০, চেইস ২-০-৮-১, জোসেফ ৪-০-২১-১, মোটি ৪-০-২৫-২, ম্যাককয় ৩-০-৩২-১)।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ: ১৮.৩ ওভারে ১০২ (কিং ৮, চার্লস ১৪, ফ্লেচার ০, পুরান ৫, চেইস ৩২, পাওয়েল ৬, শেফার্ড ০, আকিল ৩১, মোটি ০, জোসেফ ০, ম্যাককয় ১*; হাসান ৩-১-২৩-১, শেখ মেহেদি ৪-১-২০-২, তাসকিন ৩.৩-০-১৬-২, তানজিম ৪-১-২২-২, রিশাদ ৩-০-১২-২, মিরাজ ১-০-৮-০)
ফল: বাংলাদেশ ২৭ রানে জয়ী।
সিরিজ: তিন ম্যাচের সিরিজে বাংলাদেশ ২-০তে এগিয়ে।
ম্যান অব দা ম্যাচ: শামীম হোসেন।