বিদায়ী টেস্ট খেলতে সম্ভবত দেশে ফেরা হচ্ছে না সাকিব আল হাসানের। দেশে ফেরার পথে থাকলেও দুবাই থেকেই যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে যাবেন বাংলাদেশের সর্বকালের সেরা ক্রিকেটার।
দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে মিরপুর টেস্ট খেলতে বৃহস্পতিবার রাতে ঢাকায় ফেরার কথা ছিল সাকিবের। যুক্তরাষ্ট্র থেকে রওনা হয়েছিলেন তিনি। দুবাইয়ে যাত্রবিরতি চলছিল তার। তিনি বৃহস্পতিবার জানান, নিজের নিরাপত্তার জন্যই এখন দেশে ফিরতে পারছেন না।
জানতে চাইলে সাকিব বলেন, “দেশে ফেরার কথা ছিল… কিন্তু এখন হয়তো ফিরতে পারব না সিকিউরিটি ইস্যুর জন্য, আমার নিজের নিরাপত্তার জন্যই…।”
সাকিবের কথায় ‘হয়তো’ শব্দটি থাকায় দেশের ফেরার সম্ভাবনাও কিছুটা রয়ে যায়। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত কখন আসতে পারে, এটি জানতে চাওয়ার পর তার উত্তর, “এখন সিদ্ধান্ত চূড়ান্তই বলতে পারেন।”
যেটির মানে, দেশ থেকে টেস্ট ক্যারিয়ারের ইতি টানার ইচ্ছে পূরণ হচ্ছে না তার। এর মধ্যে আর নাটকীয় কোনো পরিবর্তনা না হলে টেস্ট ইতিহাসের সেরা অলরাউন্ডারদের একজন এই সংস্করণে শেষ ম্যাচটি খেলে ফেলেছেন ভারতের বিপক্ষে কানপুরে।
কানপুর টেস্ট শুরুর আগের দিনই সাকিব ঘোষণা দিয়েছিলেন, দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে মিরপুর টেস্ট খেলে দেশের মাঠ থেকে এই সংস্করণকে বিদায় জানাতে চান তিনি। হত্যা মামলার আসামী হওয়ায় দেশে ফেরা ও পরে নির্বিঘ্নে দেশ ছাড়ার নিশ্চয়তা চেয়ে আকুতি জানিয়েছিলেন তিনি।
বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদ ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া শুরুতে কঠোর বার্তা দিয়েছিলেন। সাকিবকে নিজের রাজনৈতিক অবস্থান পরিষ্কার করতে বলেছিলেন ক্রীড়া উপদেষ্টা। পরে ফেইসবুকে দীর্ঘ বাতায় দুঃখপ্রকাশ করে নিজের অবস্থান তুলে ধরেন সাকিব। বিসিবি সভাপতি ও ক্রীড়া উপদেষ্টার কণ্ঠের সুরও পরে বদলে যায়।
সাকিবের দেশে ফেরা নিয়ে গত কিছুদিন ধরেই নানা তৎপরতা চলছে ক্রিকেট অনুসারীদের মধ্যে। স্কোয়াড ঘোষণার বেশ আগে থেকে তার দেশে ফেরা ঠেকাতে মিছিল, স্লোগানসহ প্রতিবাদী কর্মসূচি দেখা গেছে মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামের আশেপাশে। তাদের প্রতিবাদ ফুটে উঠেছে স্টেডিয়ামের দেয়ালে নানা লেখা আর গ্রাফিতির মাধ্যমেও। সাকিব-বিরোধী ও সাকিবের ভক্তদের মুখোমুখি অবস্থান ও কিছুটা ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনাও ঘটেছে বলে শোনা গেছে।
সেসব কর্মসূচি চলছে এখনও। সাকিবের কুশপুত্তলিকা দাহ করা হয়েছে বুধবার। তার দেশে ফেরা ঠেকাতে ফেইসবুকে ইভেন্ট খোলা হয়েছে এবং একটি পক্ষ বৃহস্পতিবার বিসিবিতে স্মারকলিপি দেওয়ার উদ্যোগও নিয়েছে।
সাকিব শেষ পর্যন্ত দেশে ফিরতে না পারার পেছনে এসব কর্মসূচির বড় ভূমিকা আছে বলে জানা গেছে। দক্ষিণ আফ্রিকা দল এখন ঢাকায়, মিরপুর স্টেডিয়ামে অনুশীলন চলছে তাদের। এই সময়ে স্টেডিয়ামের পাশেপাশে আন্দেলন হলে এবং সেসবকে ঘিরে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হলে দক্ষিণ আফ্রিকা দল ভড়কে যেতে পারে এবং আন্তর্জাতিক আঙিনায় দেশের ক্রিকেটের সামগ্রিক ভাবমূর্তি প্রশ্নবিদ্ধ হতে পারে বলে ধারণা করছেন অনেকেই। সেই ভাবনা থেকেই সংশ্লিষ্টরা সাকিবকে আপাতত দেশ ফিরতে মানা করেছেন বলে জানা গেছে বিসিবির কয়েকটি সূত্র থেকে।
সবশেষ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে মাগুরা থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন সাকিব। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর অগাস্টে তার বিরুদ্ধে হত্যা মামলা হয় আদাবর থানায়। গার্মেন্টসকর্মী রুবেল হত্যার ঘটনায় দায়ের করা মামলায় ১৫৬ জন আসামির মধ্যে ২৮ নম্বরে আছে তার নাম।
আইসিসি অলরাউন্ডারদের র্যাঙ্কিংয়ে সবচেয়ে বেশি সময় শীর্ষে থাকা অলরাউন্ডার শেষ পর্যন্ত আর খেলতে না পারলে তার ক্যারিয়ার শেষ হচ্ছে ৭১ টেস্টে।
আগামী ফেব্রুয়ারি-মার্চে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি পর্যন্ত ওয়ানডে ক্রিকেটে খেলে যাওয়ার কথা আগেই জানিয়েছেন তিনি। ওই টুর্নামেন্টের আগ পর্যন্ত দেশের মাঠে কোনো ওয়ানডে নেই বাংলাদেশের। আগামী মাসে আফগানিস্তানের সঙ্গে সিরিজ আছে সংযুক্ত আরব আমিরাতে, ডিসেম্বরে ওয়েস্ট ইন্ডিজে আছে আরেকটি সিরিজ। দেশের বাইরে থেকেই সাকিবকে খেলার অনুমতি বিসিবি দেবে কি না, সেটিই এখন দেখার ব্যাপার। এছাড়াও ডিসেম্বরের শেষ দিকে বিপিএলে চিটাগং কিংসের হয়ে খেলার কথা তার। সেটিও এখন ঝুলে গেল নিশ্চিতভাবেই।