দেশের প্রধান শেয়ারবাজারে মূল সূচকের ব্যাপক দরপতন হয়েছে। যা চার বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে গেছে। সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবসে আজ রোববার লেনদেন হওয়া বেশির ভাগ কোম্পানির শেয়ারের বড় ধরনের মূল্য পতনের কারণে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সূচক ডিএসইএক্স ৫ হাজার পয়েন্টের মাইলফলকের নিচে নেমেছে।
আজকের এ দরপতন ছিল সাম্প্রতিক সময়ে ঢাকার শেয়ারবাজারে এক দিনে সর্বোচ্চ। লেনদেন শেষে এদিন ডিএসইএক্স ১৪৯ পয়েন্ট বা প্রায় ৩ শতাংশ কমে নেমে আসে ৪ হাজার ৯৬৫ পয়েন্টে। ফলে চার বছরের বেশি সময় পর ডিএসইএক্স সূচকটি আবারও ৫ হাজার পয়েন্টের নিচে নামে। এর আগে সর্বশেষ ২০২০ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর ডিএসইএক্স সূচক ৪ হাজার ৯৬৩ পয়েন্টের সর্বনিম্ন অবস্থানে ছিল।
দরপতনের এক পর্যায়ে ক্ষুব্ধ হয়ে মতিঝিলের রাস্তায় নামেন একদল বিনিয়োগকারী। বিশ্লেষকেরা বলছেন, আস্থাহীনতার কারণে শেয়ারবাজারে ‘অযৌক্তিক’ দরপতন ঘটছে।
বাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, বেশ কিছুদিন ধরে বাজারে দরপতন চললেও বিএসইসি ও সরকারের পক্ষ থেকে বিনিয়োগকারীদের আশ্বস্ত করার মতো কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। শেয়ারবাজার আদৌ সরকারের বিবেচনা বা গুরুত্বের তালিকায় রয়েছে কি না, এ নিয়ে প্রাতিষ্ঠানিক ও ব্যক্তিশ্রেণির বিনিয়োগকারীরা দ্বিধায় রয়েছেন। এ কারণে কেউ এই বাজারে নতুন করে বিনিয়োগে এগিয়ে আসছেন না।
বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান ফারুক আহমেদ সিদ্দিকীর মতে, পুনর্গঠিত বিএসইসি নিজেদের বাজারবান্ধব হিসেবে প্রমাণ করতে ব্যর্থ হয়েছে। বাজারের সব পক্ষকে আস্থা ও বিশ্বাসে নিয়ে মিলেমিশে কাজ করার দৃষ্টিভঙ্গিতেও ঘাটতি ছিল তাদের। এ কারণে এখন এসে হয়তো তারা বাজার মধ্যস্থতাকারীদের কোনো সহায়তা পাচ্ছে না।
একাধিক ব্রোকারেজ হাউসের শীর্ষ নির্বাহী জানান, শেয়ারের দাম যত কমছে, ঋণগ্রস্ত বিনিয়োগকারীদের ঋণ সমন্বয়ে ফোর্সড সেলের চাপ তত বাড়ছে। বাজারে ক্রেতাসংকট থাকায় বিক্রির এ চাপ সামাল দেওয়া যাচ্ছে না। বেশির ভাগ শেয়ারের দাম দিনের সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে এলেও অনেকে তা বিক্রি করতে পারছেন না। বিনিয়োগকারীদের মধ্যে চরম আস্থাহীনতার পাশাপাশি ক্ষোভও তীব্র হয়েছে। এ ক্ষোভ থেকেই রাস্তায় নেমেছেন বিনিয়োগকারীরা।
মতিঝিলে বিক্ষোভ
বিনিয়োগকারীদের বিক্ষোভ হয়েছে বাংলাদেশ ক্যাপিটাল মার্কেট ইনভেস্টর অ্যাসোসিয়েশনের (বিসিএমআইএ) ব্যানারে। বিনিয়োগকারীরা বলেন, টানা পতনের সময় বিএসইসি নিশ্চুপ রয়েছে, যা তাঁদের হতাশ করেছে। তাঁরা বিএসইসি চেয়ারম্যানের পদত্যাগও দাবি করেন। এ ছাড়া সরকারি উদ্যোগে বিশেষ বিনিয়োগ তহবিল গঠনসহ বেশ কয়েকটি দাবি জানান তাঁরা।
এদিকে শেয়ারবাজারে সাম্প্রতিক দরপতনের কারণ অনুসন্ধানে চার সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছে বিএসইসি। পাশাপাশি পরিস্থিতির উত্তরণে করণীয় বিষয়েও সুপারিশ করবে এ কমিটি। ১০ দিনের মধ্যে কমিটিকে তাদের প্রতিবেদন কমিশনে জমা দিতে বলা হয়েছে।
জানতে চাইলে বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, বর্তমানে বাজারে মূল্য আয় অনুপাত সর্বনিম্ন পর্যায়ে রয়েছে। এ অবস্থায় বাজারে প্রাতিষ্ঠানিক ও ব্যক্তিশ্রেণির বিনিয়োগ বাড়বে বলে আমরা আশা করছি। এ ছাড়া সরকারি মালিকানাধীন কোম্পানি বাজারে আনতে এবং রাষ্ট্রায়ত্ত বিনিয়োগ সংস্থা আইসিবির মাধ্যমে অর্থসহায়তা পেতে বিএসইসির পক্ষ থেকে চেষ্টা করা হচ্ছে।
৮৬% প্রতিষ্ঠানেরই দরপতন
ঢাকার বাজারে আজ ৩৯৬ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার লেনদেন হয়। এর মধ্যে ৩৪১টি বা ৮৬ শতাংশেরই দরপতন হয়েছে। দাম বেড়েছে ২৯টির বা সাড়ে ৭ শতাংশের। আর অপরিবর্তিত ছিল ২৬টির বা সাড়ে ৬ শতাংশের দাম। লেনদেন হওয়া কোম্পানিগুলোর মধ্যে ২৭টির দাম দিনের সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে আসে। এসব শেয়ারের কোনো ক্রেতা ছিল না।
সূচক মনস্তাত্ত্বিক সীমার নিচে
আজ এক দিনে ডিএসইএক্স সূচকের যে পতন হয়েছে, তা গত প্রায় আড়াই বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। এর আগে সর্বশেষ ২০২২ সালের ৭ মার্চ এক দিনে ডিএসইএক্স সূচকটি কমেছিল ১৮৩ পয়েন্ট।
ডিএসই সূত্রে জানা যায়, পতন ঠেকাতে ২০২২ সালের জুলাইয়ে সর্বশেষ দফায় ফ্লোর প্রাইস বা শেয়ারের সর্বনিম্ন মূল্যস্তর আরোপ করেছিল শিবলী রুবাইয়াত–উল–ইসলামের নেতৃত্বাধীন তৎকালীন বিএসইসি। ডিএসইএক্স সূচক ৬ হাজার পয়েন্টের নিচে নেমে আসায় তখন ফ্লোর প্রাইস আরোপ করা হয়েছিল। ফলে ২০২২ সালের ৩১ জুলাইয়ের পর এই সূচক ৬ হাজার পয়েন্টের নিচে নামেনি।