২৩ ডিসেম্বর ২০২৪ , ৭ পৌষ ১৪৩১ 

অর্থ-বাণিজ্য

উন্নয়ন কাজে ধীরগতি, এডিপি বাস্তবায়ন ৮ শতাংশের কম

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

প্রকাশিত: ২১:৪৫, ২৪ নভেম্বর ২০২৪

উন্নয়ন কাজে ধীরগতি, এডিপি বাস্তবায়ন ৮ শতাংশের কম

ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থমকে যাওয়া উন্নয়ন কাজের পালে এখনও হাওয়া লাগেনি; অর্থবছরের জুলাই থেকে অক্টোবর চার মাসে এডিপি বাস্তবায়ন হয়েছে মাত্র ৭ দশমিক ৯০ শতাংশ।চলতি অর্থবছরের শুরু থেকে আন্দোলন ও পরে অগাস্টে ক্ষমতার পালাবদলে সৃষ্টি হওয়া আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির পাশাপাশি প্রশাসনে রদবদলের ধাক্কায় সরকারি উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়নে এ ধীরগতি চলছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার তিন মাস পরও বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) হালনাগাদ তথ্য সে কথাই বলছে।

রোববার পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের প্রকাশিত এডিপি বাস্তবায়নের সবশেষ পরিসংখ্যানে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের জুলাই-অক্টোবর সময়ে অর্থ ব্যয় হয়েছে ২১ হাজার ৯৭৮ কোটি টাকা;

যা গত অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ৩১ হাজার ৬৯২ কোটি টাকা। অর্থাৎ গত অর্থবছরের চেয়ে কম ব্যয় হয়েছে ৯ হাজার ৩৭১ কোটি টাকা।

অর্থবছরের মোট বরাদ্দের হিসেবে প্রথম চার মাসে বাস্তবায়নের এ হার হয়েছে মাত্র ৭ দশমিক ৯০ শতাংশ। আগের অর্থবছরের একই সময়ে এ হার ছিল ১১ দশমিক ৫৪ শতাংশ। এসময়ে চলতি অর্থবছরের মত এত কম বাস্তবায়নের তথ্য মেলেনি গত ১৫ অর্থবছরেও।

ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকার চলতি অর্থবছরে এডিপিতে ২ লাখ ৭৮ হাজার ২৮৮ কোটি ৯০ লাখ টাকা বরাদ্দ রেখে বাজেট পাস করেছিল।

মাঠ পর্যায়ের কাজে ঢিমেতালের পাশাপাশি ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর দায়িত্বে আসা অন্তর্বর্তী সরকার অগ্রাধিকার প্রকল্প বাস্তবায়নে জোর দেয়। এতে করে আগের সরকারের নেওয়া অনেক প্রকল্পে অর্থছাড় কমিয়ে দেওয়া হয়। ফলে চলমান অনেক প্রকল্পের কাজও স্থগিত হয়ে যায়। এসব মিলিয়ে এডিপির বরাদ্দ করা অর্থ ব্যয় কমে যায়, বলছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

আইএমইডির হালনাগাদ প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, একক মাস হিসেবে অক্টোবরে বাস্তবায়নের হার হয়েছে ৩ দশমিক ১৫ শতাংশ বা ৮ হাজার ৭৬২ কোটি টাকা। আগের ২০২৩-২৪ অর্থবছরের অক্টোবরে এ হার ছিল ৪ দশমিক ০৩ শতাংশ।

সাধারণত অর্থবছরের প্রথমদিকে এডিপির ব্যয়ের পরিমাণ কম থাকে। রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে এবার তা কিছুটা বেশিই কম হয়েছে। এর আগের ২০২০-২১, ২০২১-২২ ও ২০২২-২৩ অর্থবছরে এ হার ছিল যথাক্রমে ১২ দশমিক ৭৯ শতাংশ, ১৩ দশমিক ০৬ শতাংশ এবং ১২ দশমিক ৬৪ শতাংশ।
এডিপি বাস্তবায়নের এমন ধীরগতির বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক এম আবু ইউসুফ বলেন, চলমান অর্থনৈতিক বাস্তবতায় তাড়াহুড়ো করার কোনো সুযোগ নেই।

প্রথম প্রান্তিকে এডিপি বাস্তবায়ন ১৫ বছরে সর্বনিম্ন
“দুটো বিষয় এখানে ঘটেছে। প্রথমত পরিবর্তত বাস্তবতায় আগের সরকারের সময়ে নেওয়া 'রাজনৈতিক' প্রকল্প রিভিউ করা হচ্ছে। দ্বিতীয়ত, কৃচ্ছ্রতাসাধন ও গুনগত ব্যয়ে প্রাধান্য দেওয়া।"

এমন প্রেক্ষাপটে প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে যাচাইবাছাই করে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ব্যয় করার বিষয়টিকে সংশোধিত এডিপিতে গুরুত্ব দেওয়ার পরামর্শ দেন এই উন্নয়ন অর্থনীতিবিদ।

তার ভাষ্যে অর্থনীতির সংকট উত্তরণে রাজনৈতিক প্রকল্পে প্রাধান্য না দিয়ে বরং যেসকল প্রকল্প 'জনমানুষের উপকারে' বেশি আসবে এবং 'কর্মসংস্থান তৈরি করবে' সেগুলো বাস্তবায়ন আগে প্রয়োজন।
চলতি অর্থবছরে 'এডিপি বাস্তবায়ন' তুলনামূলক কম হবে বলেও মনে করেন অধ্যাপক ইউসুফ।