শেয়ার বাজারে আলোচিত ব্যবসায়ী হিরু ও তার পরিবারের সদস্যদের ১১৫ কোটি ২০ লাখ টাকা জরিমানা করেছে বিসিএইসি (বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন)। এরমধ্যে রয়েছেন হিরু এবং তার স্ত্রী, বাবা ও বোন।
বৃহস্পতিবার (৫ ডিসেম্বর) সমবায় অধিদপ্তরের কর্মকর্তা হিরুকে ফরচুন স্যুজ, ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্স, এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক ও সোনালী পেপার অ্যান্ড বোর্ড মিলসের শেয়ার দরে করসাজির ঘটনায় মোট ৩২ কোটি ৪৬ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।
এ চার কোম্পানির শেয়ার কারসাজিতে জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়ায় তার পিতা আবুল কালাম মাতবর, তার স্ত্রী কাজী সাদিয়া হাসান ও বোন কনিকা আফরোজকে জরিমানা করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি। হিরুর অধীনে থাকা ডিআইটি কো অপারেটিভ লিমিটেডকে পৃথকভাবে জরিমানা করা হয়েছে।
কমিশন সভায় নেওয়া এ সিদ্ধান্ত পরে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানিয়েছে বিসিএইসি (বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন)।
এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে মোবাইল ফোনে কল করা হলেও হিরু সাড়া দেননি। এসএমএসের জবাবও দেননি।
কারসাজির প্রমাণ থাকার কথা তুলে ধরে বিএসইসি জরিমানার বিষয়ে বলেছে, ‘ফরচুন স্যুজ এর শেয়ার লেনদেনে কারসাজি করে সংশ্লিষ্ট সিকিউরিটিজ আইন ভঙ্গের দায়ে হিরুকে ১১ কোটি টাকা অর্থ দণ্ড করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
অন্য কোম্পানির মধ্যে ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার কারসাজিতে ১৯ কোটি ১৫ লাখ টাকা, এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকের শেয়ারের জন্য দুই কোটি ৩০ লাখ টাকা ও সোনালী পেপার অ্যান্ড বোর্ড মিলসের শেয়ারের জন্য এক লাখ টাকা জরিমানা করা হয় হিরুকে।
অপরদিকে হিরুর পিতা আবুল কালাম মাতবরকে ফরচুন স্যুজের শেয়ার কারসাজিতে ৭ কোটি ২০ লাখ টাকা, ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্সের জন্য ২২ কোটি ৩০ লাখ টাকা, এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকের জন্য চার কোটি ৩০ লাখ টাকা ও সোনালী পেপার অ্যান্ড বোর্ড মিলসের জন্য এক লাখ টাকা করে মোট ৩৩ কোটি ৮১ লাখ টাকা জরিমানা করে বিএসইসি।
হিরুর স্ত্রী কাজী সাদিয়া হাসানকে ফরচুন স্যুজের শেয়ারে কারসাজির ঘটনায় ২৫ কোটি টাকা, ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্সে এক কোটি ৯০ লাখ টাকা, এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকের জন্য ১১ লাখ টাকা ও সোনালী পেপার অ্যান্ড বোর্ড মিলসের জন্য ২ লাখ টাকা করে মোট ২৭ কোটি তিন লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।
সমবায় কর্মকর্তা হিরুর বোন কনিকা আফরোজকে ফরচুন স্যুজের শেয়ারে কারিসাজির জন্য ১৯ কোটি টাকা, ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্সের জন্য দুই কোটি ৯০ লাখ টাকা, এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক ও সোনালী পেপার অ্যান্ড বোর্ড মিলস শেয়ারে কারসাজির জন্য এক লাখ টাকা করে জরিমানা করা হয়।
চার কোম্পানির শেয়ার কারসাজিতে এবার কনিকা আফরোজকে মোট ২১ কোটি ৯০ লাখ টাকা জরিমানা করে বিএসইসি।
এছাড়াও ফরচুন স্যুজে শেয়ার কারসাজির ঘটনায় ডিআইটি কোঅপারেটিভ লিমিটেডকে ১৫ কোটি টাকা, সাজিদ মাতবরকে এক লাখ টাকা জরিমানা করে করে কমিশন।
অপরদিকে ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার দরে কারসাজির ঘটনায় সাজিদ মাতবরকে এক কোটি ৬০ লাখ টাকা, মোহাম্মাদ বাশারকে এক কোটি ১৫ লাখ টাকা, কাজী ফুয়াদ হাসানকে এক কোটি টাকা, ডিআইটি কো অপারেটিভকে ৮৪ লাখ টাকা জরিমানা করে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি।
এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকের শেয়ার কারসাজিতে হিরুর কোম্পানিসহ বেশ কয়েকজনের জড়িত থাকার প্রমাণ পেয়েছে বিএসইসি। এজন্য হিরুর অধীনে থাকা ডিআইটি কোঅপারেটিভকে ১২ লাখ টাকা, আলেয়া বেগমকে এক লাখ টাকা, মোহাম্মাদ বাশারকে এক লাখ টাকা, হিরুর মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান মোনার্ক হোল্ডিংস লিমিটেডকে এক লাখ টাকা ও সাজিদ মাতবরকে এক লাখ টাকা করে জরিমানা করে কমিশন।
এর বাইরে সোনালী পেপার অ্যান্ড বোর্ড মিলসের শেয়ারে কারসাজির দায়ে কাজী ফরিদ হাসানকে দুই লাখ টাকা, কাজী ফুয়াদ হাসানকে ৩৫ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।
প্যারামাউন্ট ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার লেনদেন কারসাজির ঘটনায় তালিকাভুক্ত আরেক প্রতিষ্ঠান সোনালী পেপার অ্যান্ড বোর্ড মিলসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং প্রত্যেক শেয়ারহোল্ডার পরিচালককে ২০ লাখ টাকা করে জরিমানা করা হয় কমিশন সভায়।
প্রাইম ফাইন্যান্স ফার্স্ট মিউচুয়াল ফান্ডের ইউনিট দরে কারসাজির ঘটনায় মাহফুজা আকতারকে ১০ লাখ টাকা এবং দেওয়ান সালেহিন মাহমুদকে ৪০ লাখ টাকা জরিমানা করে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি।
মূল্য ব্যবসার (কোর বিজনেস) বাইরে বিনিয়োগ করায় মোনার্ক হোল্ডিংস লিমিটেডকে ৫ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। একইসঙ্গে ৩০ দিনের মধ্যে বিনিয়োগ তুলে আনতে নির্দেশ দেওয়া হয়।
নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বিনিয়োগ তুলে না আনলে পরবর্তী প্রতি দিনের জন্য ১০ হাজার টাকা করে জরিমানা করবে জানিয়েছে বিএসইসি।