ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটকে শক্তিশালী বলে মন্তব্য করেছেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহ উদ্দিন আহমেদ। একই সঙ্গে এ সিন্ডিকেট ভাঙ্গ কঠিন বলেও মত তার।
বুধবার সচিবালয়ে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠক শেষে বাজার পরিস্থিতি নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে দিচ্ছিলেন উপদেষ্টা।
বাজারে ঘাটতি শুরু হওয়ার পর প্রায় এক সপ্তাহ আগে সয়াবিন তেলের দাম লিটারে ৮ টাকা বাড়িয়ে ১৭৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়। তবে এর পরেও বাজারে সয়াবিন তেলের পর্যাপ্ত সরবরাহ নেই বলে অভিযোগ আসছে।
এ বিষয়ে সাংবাদিকরা অর্থ উপদেষ্টার দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি বলেন, “বাজারের ব্যাপারটার সঙ্গে আমাদের একটু গ্যাপ আছে। কারণ, আমরা দাম যেটা ধরি, যে দামে বিক্রি করার কথা সেটাই। এখানে বাজারে অনেক রকম ব্যাপার আছে। যেমন ৮ টাকা দাম যেদিন বাড়ে, তার পরের দিন বাজারে অনেক সাপ্লাই ছিল। যখনি দাম বাড়ানো হয়েছে, ব্যবসায়ীদের একটা প্রত্যাশা আছে ৮ টাকা বাড়িয়েছি, আবারও বাড়বে।”
তিনি বলেন, “বাজারে ভোক্তা অধিদপ্তরের ইন্সপেক্টর কত জায়গায় যাবে? কিছুদিন আগে আমি পাবনা গেলাম, সেখানেও একই অবস্থা। ডিসি বলছে- ‘আমরা কমিটি করে দিয়েছি। তারা বাজারে যায়, মনিটরিং করে, আবার যেই-সেই’।‘
“অতএব মানুষ যদি সচেতন হয়, মানুষ যদি নিজেরা মনিটিং করে কমপ্লেইন করে, তখন আমরা যথাযথ ব্যবস্থা নেব।”
কেউ বেশি দাম নিলে ভোক্তাদের ‘সরব হওয়া উচিত’ বলে মন্তব্য করেন অর্থ উপদেষ্টা।
তিনি বলেন, “আমাদের এখানে হয় কী, ভোক্তাদের সহনশক্তি (সহনশীলতা) বেশি, কিনে নিয়ে চলে যায়। কিন্তু বাইরের (বিদেশ) ক্রেতা খুব সচেতন, অভিযোগ করে। পার্শ্ববর্তী ভারতে দেখেন, দাম বেড়ে গেলে ওরা প্রটেস্ট করে। আমি এখানে প্রটেস্ট করতে বলছি না, অ্যাট লিস্ট সবাই যাতে বলে।”
তাহলে ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট কতটা শক্তিশালী- এমন প্রশ্ন করা হলে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, “ডেফিনেটলি। সিন্ডিকেট না বলে ব্যবসায়ী যারা আছে তারা যথেষ্ট শক্তিশালী। খুব বড় ব্যবসায়ী, মাঝারি বা যারা সরাসরি আমদানি করে, সাপ্লাই দেয়, আবার যারা এজেন্ট শুধু সাপ্লাইও দেয় না শুধু ডিও লেটার দেয়। এই একটা জটিল জিনিস তো, ভাঙা ডিফিকাল্ট।”
বাজার নিয়ন্ত্রণে খুচরা পর্যায়ে অভিযানের পাশাপাশি পাইকারি ও মিল পর্যায়ে কেন অভিযান চালানো হচ্ছে না জানতে চাইলে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, এত জায়গায় অভিযান চালালে তো ব্যবসায়ীদের আপনি….।
“সবাইকে একসঙ্গে ধরলে বাজারে কৃত্রিম সংকট আরও বেশি হবে। আমরা চাই সবাই ব্যবসা করুক। তবে চাই না অতিরিক্ত লাভ করুক। আর যারা উৎপাদন করে, তারা যেন না ঠকে যায়। উৎপাদনের খরচটা যেন তারা পায়, আমরা সেই চেষ্টাই করছি। একটু সময় লাগবে৷”
এদিন ক্রয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠক চাল, ডাল, মসুর ডাল, সয়াবিন তেল, সার ও এলএনজি কেনার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে বলে জানান উপদেষ্টা।
বৈঠকে সুইজারল্যান্ডের টোটাল এনার্জিসের কাছ থেকে প্রতি ইউনিট ১৪ দশমিক ২৫ ও ১৩ দশমিক ৮৭ ডলার দামে জানুয়ারি মাসের জন্য দুই কার্গো এলএনজি কেনার প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়। দুই কার্গো এলএনজি কিনতে মোট খরচ হচ্ছ ১৩২৬ কোটি ৫৪ লাখ ৪১ হাজার ২৮০ টাকা।
এছাড়া প্রতি টন ৪৫৬ দশমিক ৬৭ ডলারে ৫০ হাজার টন নন বাসমতি চাল, কাতার, সৌদি আরব ও কাফকোর কাছ থেকে তিন লটে ৯০ হাজার টন ইউরিয়া সার, প্রতিকেজি ৯৫ টাকা ৪০ পয়সা দরে ১০ হাজার টন মসুর ডাল কেনার অনুমোদন দেওয়া হয়। প্রতিটি কেনাকাটা উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতিতে হচ্ছে।
স্থানীয় উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতিতে সিটি এডিবল অয়েলের কাছ থেকে টিবিসির জন্য প্রতি লিটার ১৭২ টাকা ২৫ পয়সা দরে কেনা হচ্ছে মোট এক কোটি ১০ লাখ লিটার সয়াবিন তেল।