০৬ জানুয়ারি ২০২৫ , ২২ পৌষ ১৪৩১ 

অর্থ-বাণিজ্য

ভ্যাট বসছে:

দাম বাড়বে রেস্তোরাঁর খাওয়া, পোশাকসহ ৪৩ ধরণের পণ্য ও সেবায়

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

প্রকাশিত: ১৪:০৬, ২ জানুয়ারি ২০২৫

দাম বাড়বে রেস্তোরাঁর খাওয়া, পোশাকসহ ৪৩ ধরণের পণ্য ও সেবায়

চলতি ২০২৪–২৫ অর্থবছরের মাঝপথে এসে হঠাৎই ভ্যাট, সম্পূরক শুল্কসহ বিভিন্ন ধরনের কর বাড়িয়ে রাজস্ব বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। প্রাথমিকভাবে ৪৩ ধরনের পণ্য ও সেবার ওপর ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপ করা হবে।

গতকাল বুধবার প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে ভ্যাট বাড়ানোর প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়। পরিষদ অনুমোদনও দিয়েছে। শিগগিরই আইন মন্ত্রণালয়ের ভেটিং সাপেক্ষে এনবিআরের ভ্যাট বিভাগ থেকে ভ্যাট বাড়ানোর আদেশ জারি করা হবে বলে সূত্রটি জানায়।

এনবিআর–সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, রেস্তোরাঁর পাশাপাশি পোশাক কেনার ক্ষেত্রেও ভ্যাটের হার বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বর্তমানে তৈরি পোশাকের আউটলেটের বিলের ওপর সাড়ে ৭ শতাংশ ভ্যাট রয়েছে। এটি বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সেটি হলে পোশাক কেনার খরচও বাড়বে মানুষের। এ ছাড়া মিষ্টি কিনতে গেলেও খরচ বাড়তে পারে ভোক্তার। কারণ, মিষ্টির দোকান থেকে মিষ্টি কেনার ক্ষেত্রে ভ্যাট হার সাড়ে ৭ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।

এ ছাড়া ভ্রমণের ক্ষেত্রে নন-এসি হোটেল সেবার ভ্যাট হারও বাড়তে পারে। বর্তমানে নন–এসি হোটেল সেবার ওপর সাড়ে ৭ শতাংশ ভ্যাট রয়েছে। সেটি বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

রেস্তোরাঁ, পোশাক, হোটেল ছাড়াও অন্য যেসব খাতে ১৫ শতাংশ ভ্যাট বসতে যাচ্ছে, তার মধ্যে অন্যতম হলো উৎপাদন পর্যায়ে বিস্কুট, আচার, সিআর কয়েল, ম্যাট্রেস, ট্রান্সফরমার, টিস্যু পেপার ইত্যাদি। এ ছাড়া বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটির (বিআরটিএ) ড্রাইভিং লাইসেন্সের কার্ড বানানোর সময়ও ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

এনবিআর ভ্যাট বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, অব্যাহতির সংস্কৃতি পরিহার করে ভ্যাটের আওতা বৃদ্ধি; হ্রাসকৃত হার ক্রমান্বয়ে সংকোচন করে আদর্শ হারে উন্নীত করা এবং কর-জিডিপির অনুপাত বাড়ানোর লক্ষ্যে ভ্যাটের হার যৌক্তিক করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

সম্প্রতি ঋণের শর্ত হিসেবে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) ভ্যাটের হার ১৫ শতাংশ করার শর্ত দিয়েছে। বাংলাদেশকে দেওয়া ৪৭০ কোটি মার্কিন ডলারে চলমান ঋণ কর্মসূচির চতুর্থ কিস্তির অর্থ ছাড়ের আগে গত ডিসেম্বরে বাংলাদেশ ঘুরে গেছে আইএমএফের একটি মিশন। চলমান এই ঋণ কর্মসূচির আকার আরও ৭৫ কোটি বাড়ানোর অনুরোধ জানিয়েছিল বাংলাদেশ। এই অর্থ দিতেও সম্মত হয়েছে আইএমএফ। তবে এ জন্য কর আদায় ও নীতি গ্রহণকারী সংস্থাকে আলাদা করাসহ রাজস্ব আহরণ বাড়ানোর মতো কিছু কঠোর শর্ত দিয়েছে আইএমএফ। মূলত আইএমএফের শর্ত পূরণেই ভ্যাট বাড়ানোর এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদেরা।

জানতে চাইলে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘অর্থনীতির সামগ্রিক বাস্তবতায় সরকারের ওপর দায়দেনার চাপ বাড়ছে। সরকারের অর্থ দরকার। তাই বিভিন্ন পণ্য–সেবার ওপর ভ্যাট ও শুল্ক বাড়িয়ে রাজস্ব বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ফলে মধ্যবিত্ত ও উচ্চ মধ্যবিত্তের ওপর খরচের চাপ কিছুটা বাড়বে, এটা সত্য। আবার আমাদের রাজস্ব ও জিডিপি অনুপাত খুবই কম। সেটি বাড়ানোও দরকার। এ জন্য প্রত্যক্ষ কর বাড়াতে মধ্যমেয়াদি উদ্যোগ নেওয়া জরুরি। তবে উচ্চ মূল্যস্ফীতির এ সময়ে সাধারণ মানুষ যাতে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত না হন, সেদিকেও নজর দিতে হবে।’